আরাফার দিনে রোজা ও দিন নির্ধারণে ভ্রান্তির অবসান


তামজীদুল মাওলা কাসেমী

ফজিলতপূর্ণ দিবসসমূহের মাঝে অন্যতম আরাফার দিবস৷ এইদিনেই ইসলামের পূর্ণতার ঘোষণা এসেছে৷ অবতীর্ণ হয়েছে :

ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺃﻛﻤﻠﺖ ﻟﻜﻢ ﺩﻳﻨﻜﻢ ﻭﺍﺗﻤﻤﺖ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﻧﻌﻤﺘﻲ ﻭﺭﺿﻴﺖ ﻟﻜﻢ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺩﻳﻨﺎ

এইদিনে আরাফাহর ময়দানে জমা হয় লাখো মুসল্লী৷ নিজেকে বিলীন করে দেয় প্রভূর ইশকে মহব্বতে৷ প্রেমাস্পদের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে প্রেমিকের সর্বস্ব দিয়ে আত্মোৎসর্গের বিরল নজির আরাফাহর ময়দান৷ "মাহবুল হাবীবে লি-ইসবাতিল মাহবুবে"র পূর্ণ প্রতিছচ্ছবি হাজ্বীয়ানদের কাফেলা৷
এইদিনে লাখো জাহান্নামী জান্নাতের মালিক হয়ে যায়৷ অসংখ্য অবাধ্য হয়ে যায় বাধ্য গোলামে পরিনত৷ আল্লাহ প্রদত্ত সাধারণ ক্ষমার চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয় অগনিত বনী আদম৷
আর এইদিনের আমল সমূহের অন্যতম আমল হলো: হাজ্বীদের জন্য উকূফে আরাফাহ আর অন্যদের জন্য সওম সাধনা তথা রোজা রাখা৷ একদিনের রোজার দ্বারা অতীতের এক বছর এবং আগত বছরের মাগফিরাত হাসিল হয়৷ হাদীসে এই দিনের বহু ফাযায়েল বর্ণিত হয়েছে৷ যেমন হাদীসে আসছে:

# ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ : ﺇِﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻗَﺎﻝَ " : ﻣَﺎ ﻣِﻦْ ﻳَﻮْﻡٍ ﺃَﻛْﺜَﺮَ ﻣِﻦْ ﺃَﻥْ ﻳُﻌْﺘِﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻴﻪِ ﻋَﺒْﺪًﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻣِﻦْ ﻳَﻮْﻡِ ﻋَﺮَﻓَﺔَ، ﻭَﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﻴَﺪْﻧُﻮ، ﺛُﻢَّ ﻳُﺒَﺎﻫِﻲ ﺑِﻬِﻢُ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔَ، ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ : ﻣَﺎ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﻫَﺆُﻟَﺎﺀِ"

অন্য হাদিসে আছে:

# ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻗَﺘَﺎﺩَﺓَ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ " : ﺻِﻴَﺎﻡُ ﻳَﻮْﻡِ ﻋَﺮَﻓَﺔَ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺣْﺘَﺴِﺐُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻥْ ﻳُﻜَﻔِّﺮَ ﺍﻟﺴَّﻨَﺔَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻗَﺒْﻠَﻪُ، ﻭَﺍﻟَّﺘِﻲ ﺑَﻌْﺪَﻩُ "
‏( ﺍﻟﺴﻨﻦ ﻻﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ )
# ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺳَﻌِﻴﺪٍ ﺍﻟْﺨُﺪْﺭِﻱِّ ، ﻋَﻦْ ﻗَﺘَﺎﺩَﺓَ ﺑْﻦِ ﺍﻟﻨُّﻌْﻤَﺎﻥِ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻳَﻘُﻮﻝُ " : ﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺮَﻓَﺔَ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﺳَﻨَﺔٌ ﺃَﻣَﺎﻣَﻪُ ﻭَﺳَﻨَﺔٌ ﺑَﻌْﺪَﻩُ ".
ﺣﻜﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ : ﺻﺤﻴﺢ
# ﻋَﻦْ ﻃَﻠْﺤَﺔَ ﺑْﻦِ ﻋُﺒَﻴْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻛَﺮِﻳﺰٍ : ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ " : ﻣَﺎ ﺭُﺋِﻲَ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﻫُﻮَ ﻓِﻴﻪِ ﺃَﺻْﻐَﺮُ ﻭَﻟَﺎﺃَﺩْﺣَﺮُ ﻭَﻟَﺎ ﺃَﺣْﻘَﺮُ ﻭَﻟَﺎ ﺃَﻏْﻴَﻆُ ﻣِﻨْﻪُ ﻓِﻲ ﻳَﻮْﻡِ ﻋَﺮَﻓَﺔَ ؛ ﻭَﻣَﺎ ﺫَﺍﻙَ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻤَﺎ ﺭَﺃَﻯ ﻣِﻦْ ﺗَﻨَﺰُّﻝِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔِ، ﻭَﺗَﺠَﺎﻭُﺯِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏِ ﺍﻟْﻌِﻈَﺎﻡِ، ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﺃُﺭِﻱَ ﻳَﻮْﻡَ ﺑَﺪْﺭٍ " ، ﻗِﻴﻞَ : ﻭَﻣَﺎ ﺭَﺃَﻯ ﻳَﻮْﻡَ ﺑَﺪْﺭٍ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ؟ ﻗَﺎﻝَ " : ﺃَﻣَﺎ ﺇِﻧَّﻪُ ﻗَﺪْ ﺭَﺃَﻯ ﺟِﺒْﺮِﻳﻞَ ﻳَﺰَﻉُ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔَ ."
‏( ﺍﻟﻤﻮﻃﺎ ﻟﻺﻣﺎﻡ ﻣﺎﻟﻚ )
# ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺻِﻲ، ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻘُﻮﻝُ " : ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻳُﺒَﺎﻫِﻲ ﻣَﻠَﺎﺋِﻜَﺘَﻪُ ﻋَﺸِﻴَّﺔَ ﻋَﺮَﻓَﺔَ ﺑِﺄَﻫْﻞِ ﻋَﺮَﻓَﺔَ، ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ : ﺍﻧْﻈُﺮُﻭﺍ ﺇِﻟَﻰ ﻋِﺒَﺎﺩِﻱ، ﺃَﺗَﻮْﻧِﻲ ﺷُﻌْﺜًﺎ ﻏُﺒْﺮًﺍ "
‏( ﺍﻟﻤﺴﻨﺪ ﻟﻺﻣﺎﻡ ﺍﺣﻤﺪ )
# ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭﻱ ﻓﻲ ﺣﺪﻳﺚ ﻃﻮﻳﻞ ﺑﺼﻮﻡ ﻳﻮﻡ ﻋﺮﻓﺔ؛
ﻭَﺳُﺌِﻞَ ﻋَﻦْ ﺻَﻮْﻡِ ﻳَﻮْﻡِ ﻋَﺮَﻓَﺔَ ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ " : ﻳُﻜَﻔِّﺮُ ﺍﻟﺴَّﻨَﺔَ ﺍﻟْﻤَﺎﺿِﻴَﺔَ، ﻭَﺍﻟْﺒَﺎﻗِﻴَﺔَ ."
‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ / ١١٦٢ )

এখন প্রশ্ন হলো কোনদিন হবে সেদিন? আমাদের দেশে এবং সৌদি আরবে কী একই দিন ইয়াওমে আরাফাহ হিসাব করে রোজার বিধান, না কি ভিন্ন হবে?


অবশ্যই এই প্রশ্ন আজকে নতুন নয়৷ এবং অসমাধিত ও অমীমাংসীতও নয়৷ বরং পূর্ব থেকেই তা সমাধিত এবং মীমাংসীত বিষয়৷ সেই সোনালী যুগের সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে এমন প্রশ্নের জবাব এবং এহেন সমস্যার সমাধান চলে আসছে৷ যদিও সেটা কখনো কখনো নতুনরুপে আলোচনার টেবিলে আসে৷

যার সংক্ষিপ্ত আলোচনা হলো, চন্দ্র মাস হিসাবেই আমাদের ইবাদত বন্দীগী৷ চাঁদের উপর নির্ভর করেই আমাদের রোজা শুরু ও শেষ হয়৷ তেমনি ভাবে আরাফাহ সহ হজ্জের বিভিন্ন বিধিবিধান চাঁদের সাথেই সম্পৃক্ত৷ চাঁদ উদয় হওয়া না হওয়াই তার মূল ভিত্তি৷ যেমন পবিত্র কোরআনে এসেছে:
ﻓﻤﻦ ﺷﻬﺪ ﻣﻨﻜﻢ ﺍﻟﺸﻬﺮ ﻓﻠﻴﺼﻤﻪ

যে রমযান মাস পাবে সে রোজা রাখবে৷
আর মাস পাওয়া না পাওয়া চাঁদের উপর নির্ভর৷ যদি রমজানের চাঁদ উদিত হয় তাহলে রোজা ফরজ৷ আর এ ক্ষেত্রে স্থানীয় হিলালই ধর্তব্য৷
কারণ চাঁদ সর্ব অবস্থায় আকাশেই থাকে৷ এখন আকাশে চাঁদ থাকার দ্বারা রোজা ফরজ করলে চাঁদ উদিত হওয়ার কোন মানে হয় না৷ চাঁদের শুধু উজুদ দ্বারা রোজা ফরজ না বরং তা ঐ মাসে উদয় হতে হবে৷ আর উদয়স্থল ভিন্নতার কারণে দিন তারিখেও এ ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়৷
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন:
ﻳﺴﺌﻠﻮﻧﻚ ﻋﻦ ﺍﻷﻫﻠﺔ ﻗﻞ ﻫﻲ ﻣﻮﺍﻗﻴﺖ ﻟﻠﻨﺎﺱ ﻭﺍﻟﺤﺞ
চাঁদ হলো মানুষের জন্য মাওয়াক্বীত তথা সময় নির্ধারক৷
আর চাঁদের বিষয়টা সম্পূর্ণ স্থানীয় রুয়াত তথা চোখে দেখার সাথে সম্পৃক্ত৷ আর এমনই বুঝেছেন সালফে সালেহীন তথা সাহাবায়ে কেরাম ও তাবে তাবেয়ীন৷ এবং চার মাযহাবের বিশুদ্ধ এবং প্রশিদ্ধ সিদ্ধান্তও তাই৷
আর এটাই ফতোয়া যে ইখতেলাফে মাতালিয়' তথা চাঁদ উদয়স্থলের ভিন্নতার এতেবার করা হবে৷ তাছাড়া সহিহ মুসলিমের এক হাদীসও তার প্রমান বহন করে:

ﻋَﻦْ ﻛُﺮَﻳْﺐٍ ، ﺃَﻥَّ ﺃُﻡَّ ﺍﻟْﻔَﻀْﻞِ ﺑِﻨْﺖَ ﺍﻟْﺤَﺎﺭِﺙِ ﺑَﻌَﺜَﺘْﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﺑِﺎﻟﺸَّﺎﻡِ، ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻘَﺪِﻣْﺖُ ﺍﻟﺸَّﺎﻡَ، ﻓَﻘَﻀَﻴْﺖُ ﺣَﺎﺟَﺘَﻬَﺎ، ﻭَﺍﺳْﺘُﻬِﻞَّ ﻋَﻠَﻲَّ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ، ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺑِﺎﻟﺸَّﺎﻡِ، ﻓَﺮَﺃَﻳْﺖُ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺪِﻣْﺖُ ﺍﻟْﻤَﺪِﻳﻨَﺔَ ﻓِﻲ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮِ، ﻓَﺴَﺄَﻟَﻨِﻲ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ، ﺛُﻢَّ ﺫَﻛَﺮَ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻣَﺘَﻰ ﺭَﺃَﻳْﺘُﻢُ ﺍﻟْﻬِﻠَﺎﻝَ ؟ ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﺭَﺃَﻳْﻨَﺎﻩُ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺃَﻳْﺘَﻪُ ؟ ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﻧَﻌَﻢْ، ﻭَﺭَﺁﻩُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ، ﻭَﺻَﺎﻣُﻮﺍ، ﻭَﺻَﺎﻡَ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔُ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻟَﻜِﻨَّﺎ ﺭَﺃَﻳْﻨَﺎﻩُ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟﺴَّﺒْﺖِ، ﻓَﻠَﺎ ﻧَﺰَﺍﻝُ ﻧَﺼُﻮﻡُ ﺣَﺘَّﻰ ﻧُﻜْﻤِﻞَ ﺛَﻠَﺎﺛِﻴﻦَ، ﺃَﻭْ ﻧَﺮَﺍﻩُ، ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﺃَﻭَﻟَﺎ ﺗَﻜْﺘَﻔِﻲ ﺑِﺮُﺅْﻳَﺔِ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻭَﺻِﻴَﺎﻣِﻪِ ؟ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻟَﺎ، ﻫَﻜَﺬَﺍ ﺃَﻣَﺮَﻧَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ . ﻭَﺷَﻚَّ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﺑْﻦُ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﻓِﻲ : ﻧَﻜْﺘَﻔِﻲ ﺃَﻭْ ﺗَﻜْﺘَﻔِﻲ .
অর্থাৎ:
একদা হযরত কুরাইব র: কে উম্মুল ফযল রাঃ আমিরে মুয়াবিয়া রাঃর কাছে কোন এক প্রয়োজনে শাম দেশে পাঠান৷ কুরাইব রহঃ বলেন আমি শাম দেশে আমার কাজ সেরে রমজান মাসের শেষের দিকে মদীনায় আসি৷ তখন ইবনে আব্বাস রাঃ আমার সাথে কথোপোকথন কালে চাঁদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন৷ যে তোমরা শামে কখন রমজানের চাঁদ দেখেছো? আমি বললাম: জুম্মার দিন আমার রমজানের প্রথম চাঁদ দেখেছি৷
ইবনে আব্বাস রাযিঃ: তুমিও দেখেছো?
কুরাইব রহঃ: হুম, আমি দেখেছি৷ ওখানকার সবাই দেখছে৷ সবাই রোজা রাখছে৷ এমন কি আমিরুল মুমিনীন মুয়াবিযায়া রাযিঃও রোজা রাখছেন৷
ইবনে আব্বাস রাযিঃ বলেন: কিন্তু অামরা তো মদীনায় শনিবারে রোজার চাঁদ দেখছি৷ তাই আমরা চাঁদ দেখা পর্যন্ত রোজা রাখব৷ না হয় ত্রিশ রোজা ই পূর্ণ করবো৷ তখন কুরাইব রহ বললেন: মুয়াবিয়া রাঃ এর দেখাও কী যথেষ্ট না? তিনি বললেন: না৷ আর এমনই হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হুকুম করেছেন৷
উক্ত হাদীসটি হাদীসের বহু কিতাবে বর্ণিত হয়ে আসছে৷ যথাক্রমে: সহিহ মুসলিম, জামে তিরমিযি, সুনানে আবু দাউদ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ ও শরহুস সুন্নাহ৷

অন্য এক বর্ণনায় রাসূল সাঃ আরো স্পষ্ট করে ফরমান:
1909 ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺁﺩَﻡُ ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺷُﻌْﺒَﺔُ ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎﻣُﺤَﻢُﺩَّ ﺑْﻦُ ﺯِﻳَﺎﺩٍ ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺃَﺑَﺎ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﺍﻟْﻘَﺎﺳِﻢِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : " ﺻُﻮﻣُﻮﺍ ﻟِﺮُﺅْﻳَﺘِﻪِ، ﻭَﺃَﻓْﻄِﺮُﻭﺍ ﻟِﺮُﺅْﻳَﺘِﻪِ، ﻓَﺈِﻥْ ﻏُﺒِّﻲَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓَﺄَﻛْﻤِﻠُﻮﺍ ﻋِﺪَّﺓَ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﺛَﻠَﺎﺛِﻴﻦَ ".

হুজুর সাঃ বলেন: চাঁদ দেখে রোজা শুরু করো৷ চাঁদ দেখে আবার ঈদ করো৷ যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন বা কোন কারণ বশত চাঁদ না দেখ তাহলে মাসকে ত্রিশা পূর্ণ করো৷
- সহিহ বুখারী

এতেও স্পষ্ট যে চাঁদের সম্পর্ক স্থানীয় রুয়াতের উপর৷ তাই একই দিনে পূরো বিশ্বে রোজা শুরু করা এবং ঈদ ও আরাফাহর রোজাসহ দ্বীনি বিধান সম্ভব না৷


এবার আমরা আরাফাহর দিন ও আমাদের রোজার দিন নির্দিষ্ট করি৷ যদিও হাদীসে ইয়াওমে আরাফাহর কথা আসছে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নয়-ই যিলহজ্জ৷ যা স্পষ্ট বিষয়৷
আমরা যদি সৌদির সাথে আরাফাহর দিন হিসাবে রোজা রাখতে যাই৷ যেমনটি আমাদের কিছু ভাই করে থাকে৷(হাদাহুমুল্লাহ)
তাহলে আমাদের জন্য তা সম্ভবও নয়৷ কারণ সৌদি আরব আমাদের সাথে কয়েক ঘন্টার পার্থক্য রয়েছে৷ যদি মক্কার ইয়াওমে আরাফাহ হিসাবে আমরা রোজা শুরু করি দেখা যাবে তখন সৌদি আরবে এখনো আরাফাহর দিন শুরুই হয় নাই৷ আবার ইফতারের সময়ও দেখা যাবে সৌদিতে আরাফাহর দিন এখনো শেষ হয় নাই৷ তিনঘন্টা বাকি৷ তাই শুধু আরাফাহর দিন হিসাব করে রোজা রাখা সম্ভব না৷ তাই বাংলাদেশীদের জন্য যিলহজ্জের নয় তারিখেই আরাফাহর রোজা রাখতে হবে৷ আর তা হলো এ বৎসর ( ১৪৩৯ হিঃ/২০১৮ ঈসায়ী) মঙ্গলবার৷
তাছাড়া সৌদির সাথে তাল মিলালে দেখা যাবে আরাফাহর যখন দিন সেদিন পৃথিবীর কোথাও কোথাও তখন রাত৷ তখন কী তারা রাতেই রোজা রাখবে!
এ জন্য এখতেলাফে মাতালিয়' তথা চন্দ্র উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য৷

আল্লাহ সবাইকে সমুচিত বুঝ, সহিহ ফাহম দান করুন৷ বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট৷
ﻭﻣﺎ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﺇﻻ ﺍﻟﺒﻼﻍ

কোন মন্তব্য নেই

nicodemos থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.