হিন্দুধর্মের জাতিভেদ প্রথা
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহ
আজ আমরা জানবো হিন্দুদের জাতি ভেদ প্রথা সম্পর্কে।
হিন্দু ধর্মের একটি মৌলিক বিশ্বাস হলো, জাতি ভেদ প্রথা।সকল হিন্দুরা চার ভাগে বিভক্ত।
১. ব্রাহ্মণ।
২. ক্ষত্রিয়।
৩. বৈশ্য।
৪. শূদ্র।
তাদের পরিচয়:
১. ব্রাহ্মণ : হিন্দু সমাজে সর্বোচ্চস্তরের। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী তারা প্রভু ব্রহ্মার মুখ থেকে সৃষ্ট।রাষ্ট্র ও সমাজ রক্ষক ও পালক একমাত্র তারাই।পৃথিবীর সব কিছুর মালিক তারাই।অন্যরা যা ভোগ করে তা ব্রহ্মার দয়ামাত্র।সে মূর্খ হলেও শ্রেষ্ঠ।বেদ পাঠ করা,শিক্ষা দেওয়া,দান গ্রহণ করা,হিন্দু সমাজে ৮টি প্রচলিত বিবাহের মধ্যে ৬টিই তাদের অধিকার এবং বৈধ।পুজা,আর্চনা,আরাধনায় পোরোহিত করবেন তারা।আরো বহু সুবিধা তাদের রয়েছে।কেবল জন্মের দাবিতেই তাদের শ্রেষ্ঠত্ব।
ক্ষত্রিয় : তারা যোদ্ধার জাত।সেনাবাহিনী,শাসন কার্জের অধিকারী তারা।তারা প্রভু ব্রাহ্মণের বাহু থেকে সৃষ্ট।
বৈশ্য : রাষ্ট্র ও সমাজের সকল বাণিজ্যিক কাজ তাদের দায়ীত্ব ও অধিকার।ব্যবসা,শিল্প কল- কারখানা,ইত্যাদির মালিক হবে এবং পরিচালনা করবে।ব্রহ্মার বক্ষ-ঊরু হতে সৃষ্ট।
শূদ্র: এরা সবচেয়ে নিম্ন শ্রেণীর মানুষ।উপরোক্ত ৩ শ্রেণীর সেবা করাই তাদের কাজ।
কোনো পুজা,আর্চনা বা মন্দিরে তারা যেতে পারেনা।কোনো ব্রাহ্মনকে গালি দিলে শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।তারা ব্রাহ্মণকে উপদেশ দিলে জিহ্বা কাটা যাবে।ব্রাহ্মণের আসনে বসলে উত্তপ্ত লৌহশলাকা দ্বারা তার কটিদেশ পুড়িয়ে তাকে নির্বাসন করা হবে।তারা অপবিত্র।তারা যদি ব্রাহ্মাণের ছাঁয়ায় পারা দেয় তাহলে ব্রাহ্মণ গোসল করবে।তারা প্রতি মাসে চুল ন্যাড়া করবে যাতে তাদের চেনা যায়।
জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে শূদ্রকে ছোট করে দেখার নির্দেশ আছে শাস্ত্রে।
বলা হয় তারা সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার পা থেকে সৃষ্ট।
এই বিভক্তির প্রেক্ষাপট
ভারতে আদিবাসী দ্রাবিড় জাতির বিরুদ্ধে আর্যজাতি যুদ্ধের হুমকি দেয়।ফলে দ্রাবিড়রা ভয়ে দেশ ত্যাগ করে অনেকেই।তবে কেউ আর্যদের পক্ষ নেয় কেউ আবার বিরুদ্ধে দাড়ায়।যুদ্ধে আর্যদের বিজয় হয়।তখন পুরো ভারতবাসি চার শ্রেণীতে ভাগ হয়।
১-যুদ্ধ পরিচালকগন।তারা হয় ব্রাহ্মণ।
২-সেনাবাহিনীরা।তারা ক্ষত্রিয়।
৩-দ্রাবিড়র পক্ষপাতিরা।তারা হয় বৈশ্য।
৪-বিরোধিরা।তারা শূদ্র।
যদিও তারা এই বিশ্বাসকে ধর্মীয় ও ইশ্বর প্রদত্ত বলে বিশ্বাস করে।
দলিত জাতি
উপরোক্ত শ্রেণী ছাড়াও আরেকটি শ্রেণী আছে,দলিতজাতি।শূদ্রদের চেয়েও তারা নির্মমের শিকার।জনসাধারণ পথ ও পন্য তারা ব্যবহার করতে পারবেনা।কুয়া,চলার পথ,পার্ক,রেস্তোরা এবং চারবর্ণের সহিত বিবাহ ইত্যাদী নিষেধ। তাদের বস্ত্র হবে মৃতব্যক্তির পরিত্যাক্ত বস্ত্র।ভাঙ্গা বাসনে আহার করবে আর লৌহ অলংকার পরে ঘুরবে।আর্থিক লেনদেন ও বিবাহ নিজেদের মধ্যে হতে হবে।তারা বর্ণ হিন্দুদের থেকে দূরে থাকবে।রাতে গ্রামে বা শহরে প্রবেশ নিষেধ।মুচি,ঝাড়ুদার,লাওয়ারিশ মৃতব্যক্তিকে শ্মশানে নেওয়া,জল্লাদ,ইত্যাদী লোকেরাই এদের দলভুক্ত।
ভারতে প্রায় এক-পঞ্চমাংশ হচ্ছে দলিত।
এবার আমরা হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রুপ বা ফিরকা নিয়ে আলোচনা করবো।
ধর্মীয় গ্রুপ
১. ব্রাহ্মকুমারী।
২. নেরংকারী.
৩. স্কোন
৪. সনাতন
গ্রুপ পরিচিতি
১. ব্রাহ্মকুমারী:তারা শিব লিঙ্গের পুজা করেনা।বেদ মানেনা।তাদের প্রধান ধর্ম নেতা হয় মহিলা।তাকে বেহেনজি বলে ডাকা হয়।পরস্পর সাক্ষাতে সম্বোধন সূচক শব্দ ব্যবহার হয় ওঁম শান্তি(শান্তি বর্ষিত হোক।প্রতি উত্তর একই হয়।তারা ধর্ম প্রচার করে।এ দলের লোকরা চিরকুমার বা চিরকুমারী থাকে।বিবাহিত কেউ এ মত পোষণ করতে চাইলে তাকে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করতে হয়।তাদের মূল উপাসনা হলো ধ্যান।বাংলাদেশে এদের সংখ্যা কম।ভারতে তা বহুল প্রচলিত।
২. নেরংকারী:তারা নিরাকার এক প্রভূতে বিশ্বাসী।তবে অবতার স্বীকার করে।তাদের সংখ্যাও ভারতে অনেক।
৩. স্কোন:তারা সাধু।নিরামিষ ভোজি।জীব হত্যা মহা পাপ মনে করে।তারা সংস্কারবাদি।ধর্মীয়
বহু বিশ্বাসকে তারা সংস্কার করেছে।তাদের সাধনা খুব কঠিন।নিম্নে তা প্রদত্ত হলো,
১/ভোরে গোসল করতে হয়।
২/শৌচকার্জ হলেই গোসল করতে হয়
৩/আহারে শুধু নিরামিষ।
তাদের চেনা যাবে,তারা মাথায় টিকি এবং পোশাকে হলুদ ও গেরুয়া রং এর লেবাস।হাতে থাকে একটি থলে।তাতে ১০০০ দানা বিশিষ্ট একটি মালা থাকে।সেই মালা দিয়ে মন্ত্র জপে,হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে।হরে রাম হরে রাম রাম হরে।
৪. সনাতন:তারা প্রচলিত হিন্দু।দেব দেবির পুজা ইত্যাদী করে।বাংলাদেশে সনাতনদের সংখ্যা বেশি।
চলবে ইনশাআল্লাহ।
কোন মন্তব্য নেই