আল্লাহ তাআলা কর্তৃক কুরআনের হিফাযত : একটি সংশয় ও তার নিরসন।

কবীর আহমদ কাসেমী


মুক্তমনার এক নাস্তিক স্বঘোষিত মুরতাদ মাসুদের একটি ভিডিও আপলোড করে বলছে, "কুরআনের হেফাযত নাকি আল্লাহ করেন। তাহলে মাসুদ কীভাবে কুরআনের ওপর জুতা রাখে! আজ থেকে মাসুদ আল্লাহর ওপর থেকে আমার বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে।"
এই মূত্রমনা মূলত কুরআনের আয়াতের মর্মই বুঝেনি, বুঝতে চায়ও না, নতুবা বুঝেও না বুঝার ভান ধরেছে। কারণ, তারা তো পেটের দায়ে নাস্তিকতার পথ বেছে নিয়েছে। তাই তাদের সাথে বিতর্কে জড়িয়েও লাভ নেই। এই আয়াত সম্পর্কে আমাদের মধ্যে যাতে নূন্যতম কোনও সন্দেহ না জাগে সেজন্যে আয়াতের তাফসীরটি উল্লেখ করছি।
.
আল্লাহ তাআলা বলেন:

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
"আমি স্বয়ং এই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।"
(সূরা হিজর: আয়াত ৯;)।
আল্লাহ তাআলা কীভাবে কুরআনের হেফাযত-সংরক্ষণ করেন?
মুফাসসিরীনে কেরাম এর ব্যাখ্যায় লিখেন, আল্লাহর হেফাযতের অর্থ হলো, তিনি কুরআনকে বিকৃত হওয়া থেকে এবং এতে কমবেশি করা থেকে হেফাযত করবেন। কিয়ামত পর্যন্ত এর বিধি-বিধান তো দূর কি বাত; কেউ কুরআনের একটি নুক্তা এবং যের-যবরও হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারবে না। নবুওয়তের পর থেকে আজ চৌদ্দশ' বছর অতীত হয়ে গেছে। ধর্মীয় ও ইসলামী ব্যাপারাদিতে মুসলমানদের কিছু অবহেলা থাকা সত্ত্বেও কুরআন মুখস্থ করার ধারা বিশ্বের সর্বত্র পূর্ববৎ বহাল রয়েছে। প্রতি যুগেই লাখে লাখে বরং কোটি কোটি মুসলমান যুবক বৃদ্ধ এবং বালক ও বালিকা এমন বিদ্যমান থাকে, যাঁদের বক্ষ-পাঁজরে আগাগোড়া কুরআন সংরক্ষিত রয়েছে। কোনও বড় থেকে বড় আলেমের সাধ্য নেই যে, এক অক্ষর ভুল পাঠ করবে। তৎক্ষণাৎ বালক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে অনেক লোক তার ভুল ধরে ফেলবে।
(তাফসীরে রূহুল মাআনী: খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ১৬/ তাফসীরে কুরতুবী: খণ্ড ১২, পৃষ্ঠা ১৮০-১৮১/তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন: খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৮১;)।
হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন, "আল্লাহ তাআলা শরীয়তকে কিয়ামত পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার মাধ্যমে কুরআনকে হেফাযত করবেন।" (রূহুল মাআনী: প্রাগুক্ত;)।
.
তাই গুটিকয়েক কুলাঙ্গার কুরআনকে অবমাননা করে ইসলামের অগ্রগতি দমাতে পারবে না। এই কাপুরুষের দলে বাঁচার জন্য চলে যায় জার্মানি, আবার মরলে হয়ে যায় বিজ্ঞানী! তাদেরকে তো আল্লাহ তাআলা জাস্ট একটু ঢিল এবং সুযোগ দিচ্ছেন। যেমনটি দিয়েছিলেন ফিরআঊনকে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ خَيْرٌ لِّأَنفُسِهِمْ ۚ إِنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ لِيَزْدَادُوا إِثْمًا ۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ.
"কাফেররা যেন মনে না করে যে, আমি যে অবকাশ দান করি, তা তাদের পক্ষে কল্যাণকর। আমি তো তাদের অবকাশ দেই যাতে করে তারা পাপে উন্নতি লাভ করতে পারে। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাজনক শাস্তি।
(সূরা আলে ঈমরান: আয়াত ১৭৮;)।

তিনি আরও বলেন:
إِنَّ بَطْشَ رَبِّكَ لَشَدِيدٌ.
"নিশ্চয় তোমার পালনকর্তার পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন।"
(সূরা বুরূজ: আয়াত ১৩;)।
এসব ইসলামবিদ্বেষীরা মূলত কিছু টাকার জন্য কুরআন অবমাননা করে। আমরা যখন এদের ভিডিওতে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার করি, তখন তারা আরও উৎসাহ পায়। তাদের উদ্দেশ্যও হাসিল হয়ে যায়। তাই এগুলো থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকি। আল্লাহ তাআলা পাকড়াও করলে তাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না। হয়তো তারা আজীবন পঙ্গু হয়ে পড়ে থাকবে, নয়তো রাস্তা-ঘাটে প্রকাশ্যে কুকুরের মতো মরবে। আর পরকালের চিরস্থায়ী শাস্তি তো রয়েছেই।

MH

কোন মন্তব্য নেই

nicodemos থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.