পরীক্ষার খাতায় কিভাবে লিখবেন?
ছাত্র জীবনের সবচেয়ে পরিচিত ও প্যারাময় একটি শব্দ পরীক্ষা। শিক্ষা জীবনের সূচনাকাল থেকে শুরু করে শেষ অবধি পর্যন্ত এর গুরুত্ব অপরিহার্য।পরীক্ষা যদিও ভালো এবং খারাপ ছাত্র নির্ণয়ের একমাত্র মাধ্যম নয়, তবুও ছাত্রদের মেধা ও যোগ্যতা যাচাইয়ে পরীক্ষার ভূমিকা অপরিসীম। পরীক্ষার মাধ্যমে কিছু ছাত্র সম্মানের সর্বোচ্চ স্থানে সমাসীন হয় আবার কিছু ছাত্র অসম্মানিও হয়। ফলে সব ছাত্ররাই পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে চায় এবং ভাল করার প্রত্যাশায় প্রাণপণ চেষ্টাও চালিয়ে যায়।
তবে ভালো পড়ালেখা ও চেষ্টার পাশাপাশি পরীক্ষায় খাতায় কিভাবে উত্তর উপস্থাপন করলে ভালো নাম্বার পাওয়া যাবে ও পরীক্ষক প্রশ্নপত্র দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে সে বিষয়টাও জানা থাকা জরুরী।আর সে বিষয়টিকে সামনে রেখেই বিভিন্ন ক্বওমী মাদারিস ভিত্তিক বার্ষিক পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু দিকনির্দেশনা। যা পালন করলে ইনশাআল্লাহ ভালো কিছুর আশা করা যায়।
১. পরীক্ষার আগের রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া।
এ ভুলটা আমরা অনেকেই করে থাকি। সকল পড়া জমিয়ে রাখি পরীক্ষার আগের রাতের জন্য। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যা কিছু পড়া বা মুতালা করার সব আগেই করে নিতে হবে।পরীক্ষার আগের রাতে মস্তিষ্ককে সম্পূর্ন ফ্রি রাখতে হবে। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে যাতে পরীক্ষার হলে মস্তিষ্ক সতেজ ও ঠান্ডা থাকে।
২. প্রশ্নপত্র দেখার পূর্বে কিছু দোয়া পড়ে নেওয়া।
প্রশ্নপত্র হাতে আসার সাথে সাথেই তা দেখার চেষ্টা না করা বরং দেখার পূর্বে আস্তাগফিরুল্লাহ, দুরুদ শরীফ ও বিসমিল্লাহ পড়ে দেখা শুরু করা। এতে প্রশ্নপত্র দেখার ক্ষেত্রে অন্তরে প্রশান্তি ও আল্লাহ প্রদত্ত সাহায্য লাভ হয়।
৩. প্রশ্নপত্র ভালোভাবে পড়া
প্রশ্নের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো প্রশ্ন ভালোভাবে একবার পড়া। অনেক ছাত্রদের অভ্যাস পুরো প্রশ্ন না পড়েই উত্তর শুরু করে দেয়। এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। বরং মাথা ঠান্ডা রেখে ধৈর্যসহ সম্পূর্ণ প্রশ্নটা পড়া চায়। কারণ প্রশ্ন ভালো করে বুঝা পরবর্তীতে প্রশ্ন লেখার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।কোন প্রশ্ন না বুঝে আসলে পরীক্ষককে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া।
৪. পরিষ্কার হাতের লেখা
যতটুকু সম্ভব পরীক্ষার খাতায় স্বচ্ছ ও পরিষ্কার করে লেখা। যাতে করে প্রশ্নপত্র দেখতে পরীক্ষকের কোন কষ্ট না হয়।হাতের লেখা পরীক্ষার্থীর সম্পর্কে
পরীক্ষকের অন্তরে একটা ইতিবাচক ধারণা তৈরী করে যার প্রভাব সম্পূর্ণ খাতার উপরেই পড়ে।যা ভালো নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করে।
৫. খাতায় প্যারা করে লেখা
যেকোন লেখা ও উপস্থাপনের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি অন্তত জরুরি। এতে লিখিত বিষয় ও উপস্থাপিত লেখার তথ্যগুলো ফুটে উঠে এবং সহজেই পরীক্ষকের সুস্পষ্ট দৃষ্টিগোচর হয়।তবে প্যারা করার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে, যাতে কোনো কথার মধ্য দিয়ে প্যারা না পরে।
৬. নিশ্চিত প্রশ্ন সবার আগে লেখা।
প্রশ্নপত্রের সবচেয়ে সহজ ও নিশ্চিত প্রশ্ন দিয়ে লেখা শুরু করা। কঠিন প্রশ্নে আগে হাত না দেওয়া। এতে করে সময় অপচয় কম হয় ও পরীক্ষার্থীর প্রতি পরীক্ষকের ভালো ধারণা জন্মায়। প্রথমেই কঠিন ও অনিশ্চিত প্রশ্ন লিখে দিলে পরবর্তীতে ভালো প্রশ্নগুলোর মধ্যেও একটা নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়।
৭. সময় মেপে লেখা
পরীক্ষার শুরুতে প্রতিটি প্রশ্নের জন্য সময় নির্ধারণ করা এবং সেই সময়ের ভিতর প্রশ্ন লিখে শেষ করা। এক প্রশ্নের সময় যেন অন্য প্রশ্নের সময়ের ভিতরে প্রবেশ না করে।এজন্য সাথে কোন ঘড়ি রাখা যাতে করে সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা যায়। এবং সবশেষে ২য় বার দেখার জন্য ১৫/২০ মিনিট সময় অতিরিক্ত রাখা।
৮. অতিরিক্ত লুজ শিট না নেওয়া।
অনেক ছাত্ররাই মনে করে পরীক্ষায় বেশী লুজ নিয়ে খাতা ভারি করলে নাম্বার বেশি পাওয়া যাবে। এটা চরম ভুল। প্রশ্নপত্র লেখতে যতটুকু লুজ প্রয়োজন হয় ততটুকু ব্যবহার করা। অযথা ফাক ফাক করে লিখে পৃষ্টা ভরার কোনো মানে নেই।এতে খাতা দেখার ক্ষেত্রে পরীক্ষকের মন বিগড়িয়ে যায়। যা কম নাম্বার পাওয়ার একটি কারণ।
৯. কখনো কিছু ছেড়ে না আসা।
পরীক্ষার হলে অনেক সময় এমন হয, প্রশ্নপত্রের কোন অংশ বা কোন প্রশ্ন আমাদের পড়ার বাহির থেকে আসে। এতে বিচলিত না হওয়া এবং সে প্রশ্ন বা অংশটি ছেড়ে না আসা। কারণ খালি খাতা জমা দেওয়ার চেয়ে কিছু লেখে আসা ভালো। যদি সঠিক হয়ে যায় তাহলে তো নাম্বার আসবেই।আর ভুল হলেও কোনো সমস্যা নেই ,এতে অন্য প্রশ্নের নাম্বার কাটবেনা।
১০. পরীক্ষা শেষে লেখিত উত্তর নিয়ে চিন্তা না করা।আমরা অনেকেই এমনটা করি,পরীক্ষার খাতায় কি লিখেছি রুমে এসে তা দেখার চেষ্টা করি। এমনটা না করাই ভালো। কারণ আপনার দেখাতে লিখিত ভুল উত্তর সঠিক হবে না। বরং উল্টা আরো ক্ষতি হবে। উদ্যমতায় ব্যাঘাত ঘটবে।তাই যা লিখে এসেছেন হল থেকে বাহির হয়ে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করা।
এখানে যা কিছু আলোচনা করা হয়েছে, সেটা মাত্র বান্দার কাজ।তবে কোন কাজে তখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সফলতা আসে না যখন পর্যন্ত আল্লাহ তা'য়ালা না চান।এজন্য অবশ্যই আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করতে হবে। দু'চার রাকাত নামাজ পড়ে চোখের পানি ফেলে রোনাজারি করতে হবে। যদি আল্লাহ তায়ালা কবুল করে নেন,তাহলে সফলতা আর কামিয়াবী আমাদের পদচুম্বন করবেই।এজন্য চেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে দোয়ার বিকল্প নেই।উভয়টার সংমিশ্রণ যখন ঘটবে তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে কুদরতি ফায়সালা হবে।
কোন মন্তব্য নেই