গীবত ও তার ভয়াবহ পরিণাম


ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় কোন ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার কোন দোষ এমন ভাবে বর্ণনা করা যা শুনলে সে নারাজ হয় তাকে গীবত বা পরনিন্দা বলে।
যদি এমন দোষ বর্ণনা করা হয়, যা বাস্তবে তার মাঝে নেই সেটাকে বোহতান বা অপবাদ বলা হয়।

হাদিসে আছে, একদিন; এক বেঁটে স্ত্রীলোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আগমন করল। সে স্ত্রী লোকটি চলে যাওয়ার পর হযরত আয়েশা রাযি. মহিলাটি বেঁটে হওয়ার কথা বললেন। তা শুনে রাসূল কারীম সা. বললেন! হে আয়েশা, তুমি মহিলাটির গীবত করেছ। হযরত আয়েশা রাযি. বললেন! হে আল্লাহর রাসূল সা. আমিতো! সে (স্ত্রীলোকটি) বেঁটে হওয়ার কথা বলছি, তার বিপরীত তো কিছু বলি নি। বেঁটে হওয়ার এ দোষটি তো তার মধ্যে রয়েছে। রাসূলূল্লাহ সা. বললেন, হে আয়েশা! যদিও তুমি সত্য কথাই বলেছ কিন্তু যখন তুমি তার বেঁটে হওয়ার দোষটি বর্ণনা করেছ তখনই তা গীবত হয়েছে।

একদিন হযরত রাসূলূল্লাহ সা. তার সাহাবাদের জিঙ্গেস করলেন! তোমরা কি জান গীবত কী? সাহাবায়ে কিরামগণ বললেন! আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই এ ব্যাপারে ভাল  জানেন। আমাদের এ ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই। রাসূল সা. বললেন, "গীবত হলো তোমার ভাইয়ের এমন দোষ বর্ণনা করা যা সে অপছন্দ করে।" সাহাবাগণ আরজ করলেন!! হে আল্লাহর রাসূল! যদি সে দোষ সেই ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? রাসূল সা. বলেন,  যদি তুমি তার সঠিক দোষ বর্ণনা কর তাহলে তা গীবত হবে। আর যদি তার মধ্যে নেই এমন দোষ নিয়ে আলোচনা কর তাহলে তা বুহতান (মিথ্যারোপ) করা হবে।"

গীবতের পরিণাম

গীবত ইসলামি শরিয়তে হারাম ও কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,
ﻭَﻳْﻞٌ ﻟِﻜُﻞِّ ﻫُﻤَﺰَﺓٍ ﻟُﻤَﺰَﺓٍ 
ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অগ্র-পশ্চাতে দোষ বলে বেড়ায়।’ (সূরা হুমাজাহ-১)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিরাজের সময় আমাকে এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো যাদের নখ ছিল তামার, তারা তাদের মুখমণ্ডল ও দেহ আঁচড়াচ্ছিল। আমি জিবরাঈল আ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা নিজ ভাইদের গীবত করত ও ইজ্জতহানি করত। (মাজহারি)
আবু সায়িদ ও জাবের রাযি. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘গীবত ব্যাভিচারের চেয়েও মারাত্মক গুনাহ। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, এটা কিভাবে? তিনি বললেন, ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তওবা করলে তার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু গীবত যে করে তার গোনাহ আক্রান্ত প্রতিপক্ষের ক্ষমা না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।

গীবত মৌখিক বর্ণনা বা লিখার দ্বারা কিংবা ইশারা বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেও হতে পারে। গীবতের ক্ষেত্রে কাফের ও মুসলমান সমান। অর্থাৎ কাফের কোন ব্যক্তির পরনিন্দা করলে সেটা গীবতের মধ্যেই শামিল হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে গীবত শোনা নিজে গীবত করার মতোই অপরাধ।

হাদিসে আছে, সাহাবি মায়মুন রাযি. বলেন, ‘একদিন স্বপ্নে দেখলাম এক সঙ্গী ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে আছে এবং এক ব্যক্তি আমাকে তা ভক্ষণ করতে বলছে। আমি বললাম, আমি একে কেন ভক্ষণ করব? সে বলল, কারণ তুমি অমুক ব্যক্তির সঙ্গী গোলামের গীবত করেছ। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি তো তার সম্পর্কে কখনো কোনো ভালোমন্দ কথা বলিনি। সে বলল, হ্যাঁ, এ কথা ঠিক। কিন্তু তুমি তার গীবত শুনেছ এবং সম্মত রয়েছ।’

গীবত একটি জঘন্য পাপাচার। এ থেকে সবাইকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’

তানভীর মুশাররাফ

২৪ April,২০১৮ মঙ্গলবার, বেলা ১১:১৮
রুওয়াকে খালেদ, দারুল উলুম দেওবন্দ।

কোন মন্তব্য নেই

nicodemos থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.