লা-মাযহাবীদের তরে দরদী মালির চিঠি...


লা-মাযহাবী বন্ধু! তোমাকেই বলছি! একটু কি ভেবে দেখা যায়…!

                       --তামজীদুল মাওলা কাসেমি

মাযহাবী লা-মাযহাবী৷ বর্তমান কালের একটা আলোচিত বিষয়৷ কালের চক্রে এখন একটা ইস্যুও হয়ে আছে৷ এ নিয়ে এযাবৎ কিছু না বললে এখন একটু বলার প্রয়োজনবোধ করছি৷ যেহেতু যারা কাজ করার তাঁরা করে যাচ্ছে৷ মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর ও চমৎকার সমাধান দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা৷
উম্মতের দরদ নিয়ে কথা বলার মত লোকেরও আলহামদুলিল্লাহ অভাব নেই৷ তবুও বিশেষ একটা কারণে আমিও একটু লেখতে বসছি৷ একজন সাধারণ তালিবে ইলম হিসাবে অথবা দেওবন্দের অধম্য একজন সন্তান হিসাবেও যেহেতু কখনো নিজেকে প্রকাশ করি তাই কিছু দায় দায়িত্বও আমার উপর বর্তায়৷ দেওবন্দের যা করনীয় সেটা দেওবন্দের একজন সন্তানেরও নৈতিক দায়িত্ব বটে৷ এটাই দেওবন্দের চাওয়া পাওয়া৷
শতভাগ নিশ্চয়তা নিয়ে এ কথা বলা যায় চৌদ্দশ বছর পর দ্বীনের কোন সামান্য আংশিক জুযও এমন নেই যার সমাধান শরীয়তে নেই৷ এমন কোন মাসআলা নেই যার সমাধান হামিলেনে দ্বীন তথা আহলে হক ওলামায়ে কেরাম দিয়ে যাননি৷ তবুও কখনো কখনো এমন কিছু বিষয় সামনে আসে যা উম্মত মনে করে এর সমাধান নাই৷ আসলে সেটা হলো না জানার দূর্ভোগ ও চরম ব্যর্থতা৷ ধর্মীয় বই পুস্তকে সব বিষয়েরই সমাধান দেয়া আছে৷ আসুন একটু জেনে নিই আজকের বিষয়ে৷
বর্তমানে মাযহাব আপনাকে কেন মানতে হবে! এমন প্রশ্ন অনেকেরই মনে মনে৷ তাও আবার নির্দিষ্ট এক ব্যাক্তির কেন৷ এর জন্য একটু বিশদ আলোচনা প্রয়োজন যাতে মূল বিষয় বুঝতে সুবিধা হয়৷ 

তাই আপনার প্রশ্ন আমার জবাব৷

প্রশ্ন: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কি মাযহাব ছিলো? যদি না থাকে এখন কেন মানা জরুরি?


উত্তর:- না! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে প্রচলিত এমন চার মাযহাব ছিলো না ঠিক৷ কিন্তু এক মাযহাব তো অবশ্যই ছিলো সেটা হলো সরাসরি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাযহাব৷ সাহাবায়ে কেরামের কোন মাসআলা সামনে আসলে সরাসরি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অহির ভিত্তিতে  আাল্লাহর পক্ষ থেকে ফতোয়া দিতেন৷ তবে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো কোন কোন সাহাবীকে অনুশীলনের জন্য বলতেন যে এ বিষয়ে তুমি ফয়সালা কর! যেমনে:
হযরত আমর রাযিঃ কে একবার হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন :
إقض بينهما يا عمرو!
তখন তিনি বললেন আপনার উপস্থিতিতে  আমি ফয়সালা করমু ইয়া রাসুলুল্লাহ! তখন হুজুর বললেন:
نعم علي انك ان اصبت فلك عشر اجور وان اجتهدت فأخطأت فلك اجر
জ্বি! সহিহ হলে দশগুন সাওয়াব ভুল হলে একগুন৷(মুসতাদরেকে হাকিম৪/৯৯)
এমনি হযরত মা'কেল মুযানী রাঃ বলেন: হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন দুই ব্যাক্তির মামলার বিচারে ফয়সালা করতে, আমি বললাম:
   !ماأحسن أن أقضي يا رسول الله
পরে হুজুর সাঃ বলেন:
الله مع القاضي ما لم يحف عمدا..
আবার কোন কোন সাহাবীকে হুজুর সাঃ নিজেই ভিবিন্ন দেশে হাকিম হিসাবে পাঠাতেন৷ আবার বলতেন কোরআন সুন্নাহ অনুযায়ী ফয়সালা করতে৷ যেমন প্রশিদ্ধ হাদীস হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রা. এর হাদীস৷ মাশহুর হওয়ায় উল্যেখ করলাম না৷
কিন্তু কথা হলো আপনি কি পারবেন! ফিলহাল কোন মাসআলা সামনে পেশ আসলে সরাসরি রাসুল সাঃ থেক জবাব নিয়ে চলতে ! না অবশ্যই পারবেন না৷ বাকি এমন ব্যাক্তির থেকে জানতে হবে যে কোরআন সুন্নাহর সহিহ জ্ঞান রাখে৷ আর সে হবে ওয়ারিসে আম্বিয়া পরহেজগার মুত্তাকী৷ নবীর দায়িত্ব পালন করবে সে৷
প্রশ্ন: সাহাবীদের যুগেও তো মাযহাব ছিলো না? তারা কেন নির্দিষ্ট একটা মাযহাব মানে নাই? যেহেতু রাসুল সাঃ নাই একটা মাযহাব তো গঠন করতে পারতো করলো না কেন?
উত্তর:-হ্যাঁ! ঐ যমানায়ও প্রচলিত এমন মাযহাব প্রতিষ্ঠা হয় নি ঠিক৷ তবে সাহাবায়ে কিরাম নিজেদের মাসআলা বড় আহলে ইলম সাহাবীদের থেকে জেনে সমাধান করতেন৷
খোদ সাহাবীদের মাঝে পুরুষ মহিলা মিলে একশ ত্রিশ জনের মত ফক্বিহ সাহাবী (রাযি.) ছিলো৷ তাঁদের মধ্যে কেউ বেশি আহলে ইলম ছিলো যেমন আয়েশা রাঃ ওমর রাঃ ইবনে মাসউদ রাঃ  ইবনে আব্বাস ইবনে ওমর যায়েদ বিন সাবিত রাযি. প্রমূখ সাহবীরা৷
কেউ আবার মধ্যম পর্যায়ের যেমন আবু বকর রা. উম্মে সালামা রা. ৷ কেউ আবার কম পর্যায়ের ছিলো৷ বহার হাল ছিলো অনেকেই৷ তাঁরা ফতোয়া দিতেন৷ শুরুর দিকে নির্দিষ্ট কোন এক সাহাবীর কাছ থেকেই জানতে হবে এমনটা ছিলো না৷ যার কাছ থেকে জানার সুযোগ হতো জেনে নিতেন৷
এমনি ভাবে তাবেয়ী দের মধ্যে মদীনায় ফুক্বাহায়ে সাবয়া সাত জন ফক্বীহ ছিলো৷ তাঁরা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া সমস্যার সমাধান কোরআন সুন্নাহ অনুযায়ী দিতেন৷

তাঁরা হলো:

১৷ সাঈদ ইবনে মুসায়্য়াব

২৷ খারেজা

৩৷আবু সালামা

৪৷ উরওয়া

৫৷কাসেম

৬৷উবাইদুল্লাহ

৭৷সুলায়মান রহিমাহুমুল্লাহ

তদ্রুপ আত্বা, মুজাহিদ ,আমর ইবনে দিনার  রহিমাহুমুল্লাহ ছিলো মক্কার ফুকাহা৷

ইবরাহীম নাখয়ী, আমের ইবনে শুরাহবিল রহিমাহুল্লাহ এরা ছিলো কুফার ফকিহ৷

আবু ইদ্রিস খাওলানী, মাকহুল রহ. এরা ছিলো শামের মুফতি৷

বছরায় ছিলো হাসান বছরি প্রমূখ তাবেয়ী গণ৷
প্রশ্ন: যদি নির্দিষ্ট এক সাহাবীর অনুসরণ করি তাহলে কি আমি দ্বীন মোয়াফিক চলতে পারবো ?
উত্তর: না! আপনি শরীয়াহ মোতাবেক চলতে পারবেন না৷ কারণ নির্দিষ্ট কোন একজন সাহাবী শরয়ীতের সমস্ত শাখাগত দিক সহ মৌলিক জিনিসগুলোকে সুবিন্যস্ত করে যাই নি৷ সময়টাও বা কোথায় ছিলো! জিহাদ যুদ্ধে ফি-সাবিলিল্লাহই তো তাঁরা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন৷

তবে সাহাবী যুগেও দু-একটা নমুনা পাওয়া যায়৷ যে তাঁরা নির্দিষ্ট এক সাহাবীর ফতোয়ার অনুসরণ করতো৷ যেমন:

একবার মদীনা বাসী হযরত ইবনে আব্বাস রা. কে প্রশ্ন করেন যে যদি কোন মহিলা হজ্জের সময় তাওয়াফে জিয়ারত করে কিন্তু  মাসিকের কারণে তাওয়াফে বিদা' করতে পারলো না৷ এমন মহিলার জন্য কি তাওয়াফে বিদা' ছেড়ে বাড়ীতে ফিরে যাওয়া জায়েজ হবে?
উত্তরে ইবনে আব্বাস রা. বলেন: হ্যাঁ! পারবে৷ তাওয়াফে বিদা' না করেও চলে যেতে পারবে৷ তখন তাঁকে মদীনা বাসি বলল:
لا نأخذ بقولك وندع زيدا
আপনার কথা গ্রহন করে আমরা যায়েদ বিন সাবিত রা. এর ফতোয়া ছাড়তে পারবো না৷
কিন্তু পরবর্তীতে যায়েদ বিন সাবিত রা. নিজের মত থেকে রুজু করেন৷ তখন তিনি হযরত সাফিয়্যা রা. এর হাদীস পেয়ে যান৷ যে তাওয়াফে বিদ' তরক করে চলে আসতে পারবে৷
২৷ ইমাম আহমদ র. বর্ণনা করেন৷ একবার আবু মুসলিম খাওলানী র. দিমাশকের এক মসজিদে যান৷ সেখানে তিনি প্রায় ত্রিশ জন বৃদ্ধ সাহাবী পান৷ যখনি তাঁদের কোন মাসআলায় ইখতেলাফ হয় তাঁরা সমাধানের জন্য  এক জন যুবকের স্মরণাপন্ন হয়৷ দেখলাম যুবকের চোখগুলো সুরমামিশ্রিত৷ দাঁতগুলো ধবধবে শুভ্রসফেদ৷ পরে জানলাম লোকটা হযরত মুয়ায ইবনে জাবাস রা.৷

প্রশ্ন: তাহলে প্রচলিত মাযহাবের সূচনা কখন হয়?

উত্তর:- সাহবীদের যুগ যখন শেষ পর্যায়ে তখনি এই মাযহাব এবং মাকতাবে ফিকরের সূচনা হয়৷
প্রথমত ফিকাহ কে অধ্যায় পরিচ্ছেদ আকারে সাজান হযরত ইমাম শাবী রহঃ৷ তাঁর রচিত কিতাব: ابواب الشعبي
এবং ইমাম মাকহুলের সুনানে মাকহুল৷
রামাহুরমুজি বলেন :
أول من صنف وبوب الربيع بن صبيح وسعيد بن ابي عروبة بها ومعمر بن راشد باليمن وابن جريج بمكة ثم ذكر مالكا وغيره.
তারপর ইমাম আবু হানিফা রহঃএর কিতাবুল আছার, ইমাম মালেক রহঃ এর মোয়াত্তা৷ আরো আরো৷ ( المحدث الفاصل)
মাযহাবের সূচনায় সর্ব প্রথম দুইটা মাযহাব হয়৷
এক: ইরাকী৷ দুই: হিজাযী৷
ইরাকী মাযহাব বলতে ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর মাযহাব তথা হানাফী মাযহাব৷ আর হিজাযী মাযহাব বলতে অন্য তিন ইমামের মাযহাব৷ মালেকি শাফেয়ী হাম্বলী৷
হিজাযের প্রথম মাযহাব হলো ইমাম মালেক রহ.এর মালেকি মাযহাব৷ পরবর্তীতে ইমাম মালেকের শাগরিদ নতুন মাযহাব সুবিন্যস্ত করে শাফেয়ী মাযহাব৷ তারপর ইমাম শাফী র.এর শাগরিদ ইমাম আহমদ রহ. নতুন করে পূরাে শরীয়তকে নিজের উসূল মোয়াফিক সাজান৷ এই হিসাবে পূরো উম্মতের মাঝে চার মাযহাব পূরো শরিয়তকে সুবন্যিস্ত করেন৷ (তুহফাতুল ক্বারী)
পরবর্তীতে এই চার মাযহাবের মধ্যে সীমাবদ্ধতা এসে যায়৷ এবং এক মাযহাব একেক দেশে প্রশিদ্ধ লাভ করে৷
যেমন :

★হানাফী মাযহাব ইরাক, মাওয়ারাউন নহর , হিন্দুস্তান দুই তৃতীয়াংশ উম্মত এ মাযহাবের অনুসারী৷

★মালেকি মাযহাব পশ্চিম অঞ্চলে জাযিরা তিউনুসিয়া মরক্কো উন্দলুস ইত্যাদি স্থানে প্রচার লাভ করে৷

★শাফী মাযহাব  মিশর শাম মালোশিয়া ইন্দোনিশিয়া ইত্যাদি জায়গায় প্রশিদ্ধ হয়৷

★আর হাম্বলী মাযহাব আরব বিশ্বের অনেক স্থানের লোকেরা অনুসরন করে থাকে৷

এভাবে পূরো দুনিয়ায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমস্ত আমল গুলো চার মাযহাবের মাধ্যে পালিত হয়৷ এভাবে আল্লাহ দ্বীনের সংরক্ষন করেছেন৷

جزا الله أئمة المسلمين عن سائر المسلمين


প্রশ্ন: কোরআন ও হাদীস এক ও অভিন্ন৷ তাহলে ইমামদের মাঝে এখতেলাফ কেন?

উত্তর:- কোরআন ও হাদীস এক হওয়া সত্বেও সাহাবাদের মোবারক জামাতের মাঝেওলইখতেলাফ ছিলো৷ তাছাড়া হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল ও বক্তব্যের মধ্যে ভিবিন্ন সময়ে ভিবিন্ন ধরনের ভিন্নতা ছিলো৷ নবুওতের তেইশ বছরে ভিবিন্ন ধরনের ভিন্নতা আসা ই স্বাভাবিক৷ তদ্রুপ সাহাবীদের মাঝেও অনেক ক্ষেত্রে ইখতেলাফ ছিলো৷ তাছাড়া মানুষের বুঝ বুদ্ধি সব বরাবর না৷ ভিন্নতা আছে৷ তাই কোরআন সুন্নাহ থেকে মাসআলা ইস্তম্বাত ইস্তেখরাজের ক্ষেত্রে ইখতেলাফ পরিলক্ষিত হয়৷
রাসুল সাঃ সাহাবাদেরকে বনু কোরাইযায় গিয়ে আছর নামাজ পড়তে বললেন৷ পরে সাহাবীদের মাঝে এখতেলাফ হয়ে দুই গ্রুপ দুই জায়গায় আছর নামাজ আদায় করেন৷ হুজুর সাঃ জানার পরে তাদের কাউকে কিছু বলেন নাই৷
মুসনিদুল হিন্দ শাহ অলিউল্লাহ দেহলবী র. বলেন: সাহাবায়ে কিরামের যমানায় ফিক্বাহ মুদাওয়্যান তথা সুবিন্যস্ত ছিলো না৷ হুজুরের আমল দেখে দেখে সাহাবায়ে কেরাম আমল করতেন৷ যেমন অজুর ফরজ কি সুন্নত কি! তা তাঁরা বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করতেন না৷ বরং হুজুরের আমল অনুযায়ী আমল করে যেতেন৷  পরে যখন সাহাবীরা পূরা দুনিয়ায় দ্বীন নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে তখন যে যেভাবে ইয়াদ করছেন বা দেখছেন ঐ ভাবে তা কোরআন সুন্নাহ অনুযায়ী ফয়সালা করতেন৷ এ কারণে সাহাবীদের মাঝে মাসআলাগত দ্বিমত পাওয়া যায়৷ (হুজ্জাতুল্লাহ)

প্রশ্ন: চার মাযহাব যদি সঠিক হয় তাহলে এক মাযহাবকে কেন খাছ করে মানতে হবে?

উত্তর:- শুধু চার মাযহাবের ইমামদের মত আর মাযহাব ই শুধু সঠিক না৷ বরং এ ছাড়াও আরো বহু মনিষী আছে যাদের মত ও মাযহাব সহিহ৷ যেমন: ইমাম তিরমিজি রহঃ তাঁর সুনানে তিরমিজিতে পুঁচিশ জনের মত ফক্বিহ মুজতাহিদের এখতেলাফ উল্যেখ করছেন৷ তাদের খেয়াল ও মাযহাব কে আমরা সহিহ মনে করি৷
তবে তাঁদের সব বিষয়ে পূর্ণ শরয়ী জীবন ব্যবস্থা আমাদের সামনে না থাকায় আমরা তা গ্রহণ করতে পারি না৷ শুধু চার ইমামের মাযহাব পূরো শরীয়ত নিয়ে পরিপূর্ণভাবে সাজানো আছে৷ এবং ঐ মাযহাবের পর্যাপ্ত কিতাবও রচিত হয়ে আছে৷ তাই চার মাযহাবের এক মাযহাব আপনাকে মানতে হবে যদি আপনি পরিপূর্ণ শরীয়ত মোতাবেক চলতে চান৷
হ্যাঁ! যদি আপনি কোরআন সুন্নাহ থেকে এখনো কোন ব্যাক্তির তাকলিদ ছাড়া সমস্ত শাখাগত মাসআলার সমাধান বের করতে পারেন৷ তাহলে আপনিও মাযহাব না মেনে মুজতাহিদ হয়ে থাকতে পারেন৷ তবে আপনি এমন মানুষ হওয়া শর্ত৷ কোরআন সুন্নাহর পরিপূর্ণ যোগ্য হতে হবে৷ যেমন ছিলেন ইমাম বুখারী রহঃ৷
বাকি এক মাযহাব মানতে হবে কেন? এ প্রশ্নের উত্তর হলো৷ যাতে আপনি চার মাযহাব মানার নাম দিয়ে শরীয়ত নিয়ে খেলতামশা হাসি ঠাট্টা না করেন৷ এ চার মাযহাবের সবগুলোই কোরআন সুন্নাহ থেকে ইস্তম্বাত করা মাযহাব৷
সবগুলোরই ভিন্ন ভিন্ন কিছু মৌলিক নিয়ম নীতি আছে৷ এখন যদি অাপনি সব গুলো এক সাথে মানে তাহলে আপনি নফস পূজা শুরু করে দিবেন নিজের অজান্তেই৷ যেমন:

এক.

যদি আপনি অজু করে কোন মহিলাকে স্পর্ষ করেন আর বলেন হানাফী মাযহাব মত অজু ভাঙ্গবে না৷ আবার রক্ত বের হওয়ার পর বললেন শাফেয়ী মাযহাব মত অজু ভাঙ্গবে না৷ তাহলে তো শয়তানের তাবেদার হয়ে সুযোগ খুজলেন! যদিও উভয় মাযহাবের উসূল ও দলিল হিসাবে সহিহ৷

দুই.

শুফয়ার ক্ষেত্রে যদি আপনি নিজে বিক্রেতার প্রতিবেশি হয়ে বলেন হানাফী মাযহাব মতে প্রতিবেশীও শুফয়ার হক রাখে৷ আবার যখন আপনি নিজে বিক্রেতা হয়ে প্রতিবেশীকে হক্কে শুফয়া না দিয়ে বলবেন শাফেয়ী মাযহাব মতে প্রতিবেশীর জন্য শুফয়া সাবিত নাই৷ তখন তো আপনি শরীয়ত নিয়ে খেলা শুরু করলেন! সুযোগ মতে মানতে চান! কোরআন তো বলে

                             لاتتبع الهوى

                   নফস পূজা করো না৷


প্রশ্ন: এই চার ইমাম কি সহিহ বিশুদ্ধ সনদে তারা তাদের ফিক্বাহকে তারতিব করেছেন?

জবাব- হ্যাঁ৷ চার ইমাম ই সহিহ সনদে সাহাবায়ে কেরাম থেকে দ্বীন হাসিল করছেন৷ যেমন ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ বিন আবু সুলায়মান থেকে তিনি ইব্রাহীম নাখয়ী থেকে তিনি আলকামা থেকে তিনি ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে তিনি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে৷ এমনি অন্যান্য ইমামরা৷
শাহ অলিউল্লাহ বলেন দুই শতাব্দী পর্যন্ত পূরো উম্মত এক মাযাহাবের অনুসারী ছিলো৷ দ্বিতীয় শতকের পরে মাযহাব সৃষ্টি হয়৷ তাই চার মাযহাবের যে কোন এক মাযহাবের যে কোন এক মাযহাবের তাকলিদ করা বর্তমানে ওয়াজিব৷

যদি কেউ প্রশ্ন করে কিভাবে সম্ভব যে একই জিনিষ কারো জন্য জরুরি না আবার কারো জন্য জরুরি?

হযরত বলেন তখন আমি বলবো এখানে মূলত ওয়াজিব হলো উম্মতের মাঝে এমন ব্যাক্তি থাকা যিনি পূরো শরিয়তের পূর্ণজ্ঞান হাসিল করবে দলিল সহকারে৷ আর জানা কথা ওয়াজিব যে জিনিসের উপর মাওকুফ তাও জরুরি৷ তাই যখন ওয়াজিবের তরিকা একটা ছিলো তখন তা অনির্দিষ্ট ভাবে আদায় করলে যথেষ্ট আর যখন ওয়াজিব পালনের একাধিক তরিকা সামনে আসে তখন নির্দিষ্ট একটা পথ গ্রহণ করা জরুরী৷ তাই বর্তমানে তাকলিদে শখছিও জরুরি৷
( الانصاف في بيان اسباب الاختلاف)
শাহ অলিউল্লাহ রহ. বলেন
بالجملة ان التمذهب للمجتهدين سر الهمه الله تعالى العلماء وجمعهم عليه من حيت يشعرون او لا يشعرون.
তাই বর্তমান যামানায় নির্দিষ্ট এক মাযহাব মানা ওয়াজিব৷ তবে সেটা লিগাইরিহী লা লি আইনিহি…
ইমাম নববী রহ বলেন:
ليس التمذهب بمذهب واحد معين من ائمة الصحابة وغيرهم من الأ ولين و ان كانوا أعلم  وأعلى درجة ممن بعدهم. لأنهم لم يتفرغوا لتدوين العلم وظبط اصوله وفروعه فليس لاحد منهم مذهب مهذب محرر مقرر. انما قام بذالك من جاء بعدهم من الأئمة الناحلين لمذاهب الصحابة والتابعين . القائمين بتمهيد احكام الواقائع قبل وقوعها. الناهضين بإيضاح اصولها وفروعها كمالك وابي حنيفة وغيرهما.( المجموع شرح المهذب)
قال الذهبي ويجب على غير المجتهدان يقلد مذهبا معينا…لكن لا يجوز تقليد الصحابة والتابعين كما قاله امام الحرمين من كل من لم يدون مذهبه فيمتنع تقليد غير الأربعة من في الإفتاء والقضاء لان المذلهب الاربعة انتشرت وتحررت حتي ظهر تقييد مطلقها وتخصيص عامها بخلاف غيرهم لانقراض اتباعهم وقد نقل االامام الرازي رحمه الله تعالي اجماع المحققين علي منع العوام من تقليد اعيان الصحابة واكابرهم(فيض القدير للمناوي)
শাহ অলিউল্লাহ রহ বলেন:
ان في الاخذ بهذه المذاهب الاربعة مصلحة عظيمة وفي الإعراض كلها عنها مفسدةكبيرة(عقد الجييد)

প্রশ্ন: সব ক্ষেত্রেই কি মাযহাব মানা জরুরি?

জবাব- মাযহাব মানার অর্থ এ নয় যে কোরআন সুন্নাহ বর্জন করা৷ বরং মাযহাব মানার অর্থ হলো যাতে কোরআন সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করতে সহজ হয়৷ তবে তিন ধরনের মাসআলায় মাযহাব মানা ছাড়া উপায় নাই
এক.
ঐ সব মাসআলা যেগুলোর মধ্য আইম্মাদের মাঝে নছ ফাহমির ইখতেলাফ৷ যেমন কোরআনের আয়াত
أو جاء أحد منكم من الغائط
এ আয়াত থেকে ইমামরা ভিবিন্ন মাসআলা ইস্তেম্বাত করেন৷ যেমন
ইমাম শাফি রহ. বলেন নাকিযে অজু তথা শুধু মাত্র সাবিলাইন থেকে নাপাক বের হলে অজ ভঙ্গ হবে৷ শরীরে অন্য কোথাও থেকে নাপাক বের হলে অজু ভাঙ্গবে না৷
ইমামা মালিক রহ. বলেন সাবিলাইন থেকে সাধারণত যা বের হয় (পেশাব পায়খানা) তা যদি বের হয় তাহলে অজু ভাঙ্গবে অন্যথায় নয়৷
ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেন শরীরের যে কোন অঙ্গ থেকে নাপাক বের হলেই অজু ভেঙ্গে যাবে৷ এমন ক্ষেত্রে একজন সাধারণ মানুষ তাকলিদ না করে কোন উপায় নাই৷
দুই.
ঐ সমস্ত মাসআলা যে মাসআলার দলিল বাহ্যিকভাবে পরস্পর বিরুধি মনে হয়৷ এবং ইমামদের মাঝে নাসিখ নাকি মানসুখ নিয়ে ইখতেলাফ৷ যেমন নামাজে রফয়ে ইয়াদাইনের মাসআলা৷ এবং নামাজে ক্বেরাত খলফাল ইমামের মাসঅালা৷ ইত্যাদি ইত্যাদি৷
তিন.
ঐ সব মাসআলা যা ইমামগন নিজস্ব উসুল অনুযায়ী কোরআন সুন্নাহ থেকে মাসআলা ইস্তেম্বাত করেন তথা ইজতেহাদি মাসআলায়ও তাকলিদ না করে উপায় নাই৷ যেমন:  কোরআনের আয়াত৷ আয়াতে অজু৷ সূরায় মাইদার অায়াত৷
إذا قمتم إلي الصلوة فاغسلوا وجوهكم وأيديكم... الاية
এ আয়াত থেকে ইমামগণ ভিবিন্ন মাসআলা বের করেন৷ যেমন অজুর মধ্যে নিয়তের হুকুম কি , তারতিব জরুরি কি না? মুয়ালাতের হুকুম কি কনুইর পরের অংশ কি হাতের সাথে ধৌত করার হুকুমে শামিল কি না এবং পা কি ধৌত করবে না কি মাসেহ করবে৷ এমন পাঁচটা মাসআলা ইজতেহাদ করে ইমামরা বের করেন৷ এক্ষেত্রে একজন সাধারন মানুষ দ্বীনের উপর চলতে হলে অবশ্যই তাকে যে কোন এক মাযহাবের অনুসরন তথা তাকলিদ করতেই হবে৷

পরিশেষে বলি! আল্লাহর দ্বীনের উপর একটু রহম করুন! আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সামনে রেখে যবান খুলুন!
কি লাভ আমাদের! যদি ইমাম আবু হানিফা দোষীই হয় আর আমরা তাঁকে সাপোর্ট দেয়াতে!
কিন্ত আসল কথা হলো সাহাবীদের পর ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মত দ্বিতীয় আরেক জনকে দুনিয়ার সূর্য চোখে দেখে নি৷ সমস্ত ফক্বিহরাও তাঁর কাছে ঋনী হয়ে আছে৷

                     لقد زان البلا د ومن عليها

               إمام المسلمين ابوحنيفة

                               

কোন মন্তব্য নেই

nicodemos থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.