কে দিয়েছে নারীর মর্যাদা?
আব্দুল্লাহ ও আমাতুল্লাহ।নব দম্পতি। সীমাহীন ভালোবাসা। এক মুহুর্তের বিচ্ছেদ যেন অসহ্য।কেউ কাউকে ছাড়া কোথাও যায় না।একে যেন অপরের প্রাণ। অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মক্কা নগরীতে যেন তাদের প্রেমের প্রবাদ শুরু হয়ে যাবে অচিরেই। প্রায় বিশ দিন হয়ে গেলো তাদের বিয়ের। সন্ধ্যে হয়েছে। পূর্বের চোখ ঝলসানো সূর্যটা কুসুম বর্ণের রুপ নিয়েছে। এক্ষুনি রক্তিম আভা ছড়িয়ে হারিয়ে যাবে পশ্চিম দিগন্তে। আব্দুল্লাহ সারাদিন তপ্তমরুতে উট চালিয়ে অবসন্ন দেহে ঘরে ফিরেছে।
স্বীয় প্রাণ, জীবনের চালিকাশক্তিকে সে ঘরে রেখে গিয়েছিলো। বাড়ি পৌঁছার আগথেকেই মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে।জান কেমন আছে?সে কি করছে? কোন কষ্ট হয়নিতো একা একা বসে থেকে?
হাজারটা প্রশ্ন যেনো তাঁকে বারবার ঘিরে ধরছিলো।
বাহিরের গেটটা সে মাড়িয়ে এসেছে। কিন্তু তখনো ভেতর থেকে কোন আওয়াজ মিলছিলো না।অন্যদিনের মতো দু'হাত বাড়িয়ে ছুটে আসেনি তাঁর হৃদস্পন্দন। বহুদুশ্চিন্তা ঘিরে ধরছে তাঁকে। বারকয়েক ডাকলো সে, স্বীয় অর্ধাঙ্গিনীকে। কিছুক্ষণপর ঠিকি বেরিয়ে এসেছে সে, কিন্তু, আগেরমতো নয়। তাঁর চাঁদমুখো চেহারাটা যেন নিস্প্রভ হয়ে আছে। কিছু হারানোর ভয় যেন মুক্তোরাঙা চেহারায় ফুটে উঠেছে।মুখ থেকে তাঁর কথা সরছে না।উভয়ি একে অপরের দিকে নিষ্পলক,নির্বাক তাকিয়ে আছে। আব্দুল্লাহ কথা বলতে শুরু করলো।কি হয়েছে জানু?
আজ অমন করছো কেনো?
আমু নিরব।
কি বলবে ও? আশার কোন বাণীযে সে শুনাতে পারবেনা। তবুও সে নিজেকে কিছুটা সংযত করতে চেষ্টা করলো। ধর্মীয় নিয়ম,সে যে মানতেই হবে।বলতে শুরু করেছে সে।
আমার পিরিয়ড শুরু হয়েছে।
আমরা আর একসাথে থাকতে পারবো না। তাঁরা জানে।আজ থেকে তাদের বিছানা পৃথক।ঘর ভিন্ন।
আজ থেকে সে অস্পৃশ্য।
এতদিন সে যাকে ছাড়া ঘুমুতে পারতো না।আজ সে তার, কাছেও যেতে পারবে না।সে অশুচি। তাঁকে ভিন্ন ঘরে আলাদা করে রাখা হবে। খাবারের প্লেটটাও কেউ তাঁর হাতে উঠিয়ে দিতে পারবেনা।রেখে আসতে হবে দূর থেকেই।বাড়ির কেউই তার সাথে কথা বলবে না।নারী হয়ে জন্মানোই যেনো ছিলো তাঁর জীবনের সব'চে বড় ভুল।
কিন্তু কিইবা করার আছে? ধর্মের আদেশ।
নির্ঘুম, অস্থির রাত কাটছে উভয়ের। দু'দিন কেটে গেলো।আর তর সইছে না। তৃতীয়দিন।
রাতে ,সংগোপনে তাঁরা সাক্ষাৎ করলো।তবে কিছুক্ষণ পরি তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে।
ভোর না হতেই তাঁরা ছুটে চলেছে ঠাকুরজীর ঘর পানে।
সকালের মৃদু হাওয়া তাদের শরীরে আছড়ে পড়ছে। হৃদয়রাজ্যেও যেনো তাঁরা তার আলতো পরশ অনুভব করছে। কিন্তু কি যেনো তাদের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।তাদের মৃদু সমীরণের সুপ্ত অনুভূতিকে গলে চেপে ধরেছে। আনমনে হাঁটছিলো দুটো মানব মানবী।
তাঁরা ঠাকুরবাড়িতে পৌঁছে গেছে।ঠাকুরমশায় আগরম বাগরম বলে বলে কি যেনো জপছিলো।আর বাড়ির চতুর্পাশে ঘুরছিলো। আব্দুল্লাহর কুর্নিশে তাঁর ঘোর কাটলো।হুবাল হুবাল বলে সে কথা শুরু করলো। তাদের কথা শুনে,প্রথমি সে তাদের ফায়সালা শুনালো।ছ'মাস কেউ কারো কাছে যেতে পারবে না।তবেই হবে তোমাদের এ অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত।বহু কাকুতি মিনতি করেছে তাঁরা।বলেছে, দু'দিন আমরা থাকতে পারিনি সেখানে ছ'মাস ?
এটা কিভাবে সম্ভব?
কিন্তু ঠাকুরজীর একটাই কথা। অপরাধ করেছো, এখন এর প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করতেই হবে। তাদের কোন কথার পাত্তাই দিচ্ছে না সে। অগত্যা তাঁরা বাড়ি ফিরে এসেছে।
এ বিরহের জ্বালা তাঁরা সহ্য করতে পারছিলো না।
ভিন্ন ভিন্ন ঘরে বসে আছে দু'জন। চিন্তার রেখা যেনো উভয়ের ভালে প্রস্ফুটিত। পুরো ঘরে সুনসান নীরবতা।
আব্দুর রহমান এসেছে।সে আব্দুল্লাহর ছোটো ভাই। নতুন এক সংবাদ নিয়ে এসেছে সে।হাশেমী বংশের বিশ্বস্ত ভালো মানুষটি নাকি নবুওয়াতের দাবি করেছেন। তিনি নাকি মানুষের মাঝে শান্তির বাণী শুনাচ্ছেন।ভ্রাতৃদ্বন্দ্ব দূর করছেন। মানুষ মানুষে ভেদাভেদ মিটিয়ে দিচ্ছেন।
আব্দুল্লাহ আর দেরী করলো না। ছুটে চললো সে কাবা ঘর পানে।
ইসলামের অমিয় বাণী শুনে সে মুগ্ধ হলো।
পিরিয়ডের বিষয়টি জিজ্ঞেস করতে সে ভুললো না।সে যথাযথ উত্তর পেলো।
কোন মানুষ অশুচি হতে পারে না।আর মহিলারাও তো মানুষ।তাই তাদের সাথে উঠা বসা ইত্যাদি সব করতে পারবে। তবে পিরিয়ড একটা কষ্টদায়ক জিনিস,তাই সে সময়টায় তোমরা সহবাস থেকে বিরত থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ ۖ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ ۖ তাঁরা আপনাকে পিরিয়ড সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে?
আপনি বলুন, সেটা একটা কষ্টদায়ক বিষয়। সুতরাং তখন তোমরা নারীদের(সহবাস) থেকে বিরত থাকো। সূরা আল বাকারা, আয়াত নং:২২২.
ইসলামের এ যুগোপযোগী সমাধান শুনে তাঁরা আর দেরি করতে পারলো না। প্রবেশ করলো ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে।
আমাতুল্লাহর মুখ ফসকে অজান্তেই বেরিয়ে এলো, ইসলামই দিয়েছে নারীদের একমাত্র সম্মানের অধিকার। ইসলামই হলো একমাত্র মানবাধিকারের ধর্ম।
আমার ব্যক্তিগত ব্লগ থেকে ঘুরে আসতে নিচে ক্লিক করুন।
https://www.blogger.com/blogger.g?blogID=6708980777786903629#publishedposts
Muazaljuhany@gmail.com
খুবই চমৎকার হয়েছে।
উত্তরমুছুন