নারীর ধর্মীয় শিক্ষা



নারীর ধর্মীয় শিক্ষাঃ শিক্ষাকারিকুলামে নতুন চিন্তা…
          --মুফতী সাঈদ আহমদ পালনপুরী দা.বা.
        
       
দুনিয়ার সৌন্দর্য্য শুধু পুরুষ দিয়ে নয়৷ কোন পুরুষ ই নিজে নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ না৷ প্রতিনিয়তই নারীর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য৷ একজন নারী শুধু মা হয়ে ই শেষ না বরং নারীজাতী মানবতার জীবন সঙ্গীও বটে৷ তাকে বাদ দিয়ে জীবন পূরো ই অচল৷ একজন নারী হায়াতে ইনসানীর অর্ধেক৷
তাই শরীয়ত দিয়েছে তাঁর পূর্ণমর্যাদা৷ রেখেছে তাঁর যথাযথ মান অক্ষুন্ন৷ ইসলাম ই একমাত্র ধর্ম যা দিতে পেরেছে একজন নারীর যথাযথ মর্যাদা৷ বুঝেছে নারীর মান ও সম্মান৷ পুর্ণ করেছে  তাঁর অধিকার৷ দ্বিতীয় কোন ধর্ম নেই যা দিতে পেরেছে নারীর মর্যাদা৷ নেই কোন মতবাদ বা থিউরি যা নারীর মান দিতে সক্ষম হয়েছে৷ শুধু ইসলাম ই একমাত্র ধর্ম যা দিয়েছে নারীর পূর্ন মান৷
একজন নারী জন্মের পর তার বাপের জিম্মায় তাঁর বরণপোষণ৷ বিবাহ'র পর স্বামীর দায়িত্বে তাঁর খরচাদি৷ স্বামীর অনুপস্থিতিতে সে থাকে ছেলের দায়িত্বে৷ ছেলের অনুপুস্থিতে রাষ্ট্র প্রধান তার খোরপোষের দায়িত্ব বহন করবে এটাই ধর্মীয় বিধান৷
যার জীবনে খরচের কোন পথ ই নেই৷ ব্যয়স্থল শূন্য এমন একজন মানুষকে তার পিতার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকেও পুরুষের পাওনা থেকে অর্ধেক দেয়া ইনসাফের কত উচ্চ পর্যায়ে৷ শুধু ইনসাফ ই নয় বরং নারীর অধিক অধিকার প্রমান করে৷ আবার সে স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পদেরও হক রাখে৷ এমন অতি অধিকার দেয়া কোন ধর্মে বা মতবাদে ভিন্ন আরেকটা নজীর নেই৷
তো বলতে চাই নারীর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা৷ একজন শিক্ষিতা মায়ের ঘর থেকে গড়ে উঠা বাচ্চা আর অশিক্ষিতা মায়ের ঘরে লালিত পালিত বাচ্চার মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ৷ শুধু শিক্ষিত হলে ই যথেস্ট না বরং মা হতে হবে তরবিয়ত ইয়াফতাহ দীক্ষিতা রমনী৷ তাহলে ই সেখান থেকে ভাল ফলের আশা করা যায়৷ তখনি মা হয় যায় স্বর্ন প্রসবা উর্বর ভূমিতে পরিনত৷ কারণ মা ই একটা শিশুর প্রথম ওস্তাদ৷ মা'র থেকে তার শিখতে হয় অনেক কিছু৷ একজন মা'র শিখানো জিনিসগুলো শিশুর সারাজীবনের পুঁজি৷ এটাই তার মূলধন ও পথ পাথেয়৷
কিন্তু তার শিক্ষা ব্যবস্থা তাঁর শিক্ষাকারিকুলাম কি হবে ট৷ তা একটু ভিন্ন৷ কারণ নারীর সাথে অঙ্গাঅঙ্গি জড়িত আছে শরীয়তের ঐশি বিধান পর্দা৷ যা এড়ানোর কোন সুযোগ নাই৷ তার সাথে পর্দার অঙ্গাঅঙ্গী সম্পর্ক৷ শিক্ষার খাতিরে পর্দা তরক করা কোন ভাবেই সমচীন নয়৷ তাই তার শিক্ষা পদ্ধতি কি হবে? কি হবে তার শিক্ষা কারিকুলাম ? তা ভেবে দেখার বিষয়৷

ইতিহাস সাক্ষি কোন মহিলা সাহাবিয়া রাঃ পরপুরুষ থেকে তা'লীম নেয়নি৷ শিক্ষার খাতিরে পর্দা লঙ্গন করেনি কোন সাহাবীয়া কিংবা তাবিয়া৷ বরং মহিলা সাহাবী থেকে অন্য পুরুষ সাহাবী ইলম হাসিল করার নজীর রয়েছে বহু৷
নবী পত্মী উম্মহাতুল মু'মিনীন থেকে সাহাবা আজমায়ীন রাঃ অনেক মাসআলার সমাধান করেছেন৷ বিশেষ করে আয়েশা সিদ্দীকা রাঃ থেকে আমরা অনেক মাসআলার সমাধান পাই৷ কিন্তু কোন মহিলা সাহাবী পর পুরুষ থেকে ইলম হাসিল করে নাই৷
তাই মহিলার শিক্ষা দীক্ষার দায়িত্ব একমাত্র আপন অভিবাবকের উপর৷ পিতা তার মেয়ে কে দীক্ষিতা করবে৷ কোন মহিলা আলেমা মুফতীয়া হওয়া জুরুরী না বরং তাকে হতে হবে মু'মীনা৷
আফছোছের কথা: ইউরুপ আমেরিকায় আলমো আর মোতাল্লাক্বাহ মনে হয় তালাযুমের সম্পর্ক!
 আরো আফছোছের কথা হলো! আজ কাল মৌলুভীরা তো কোন কাজ ই করে না৷ না বলে দ্বীনের কথা৷ না করে দ্বীনি কোন মেহনত৷ নিজের মা সহিহ ভাবে নামাজ পড়তে জানে না৷ তাকে জিজ্ঞাসাও করে না৷ নিজের বোন সহিহ শুদ্ধ কোরআন পড়তে পারে না তাকে কোরআন শিখানোর কোন ফিকির নাই৷ অশুদ্ধ তিলাওয়াত কে শুদ্ধ করার করার কোন উদ্দ্যেগ ই নাই তার!!!!
তাই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত, দ্বীনী কাজে নিজেকে লাগানো দরকার৷ এদিকে আবার তাবলীগ ওয়ালারা একটু আগে আছে!
আমি মহিলা মাদরাসার ওস্তাদদেরকে জিজ্ঞাসা করছি তাঁদের দিলের হালাত কি? তারা বলল আচ্চা নেহি, তো সবাই তো এমনি মনে হয়৷(ইল্লা মা শাআল্লাহ! )
আমাদের পালনপুরে( গুজরাটের একটি এলাকা,ইন্ডিয়া) কোন মুসলিম নারী তরবীয়ত বিহীন নাই৷ সবাই দীক্ষীতা৷ ওরা কোন দারুল উলুমে পড়ে না৷ আজকাল তো মহিলা দারুল উলুমের অভাব নেই৷ পাড়ায় পাড়ায় মহিলা দারুল উলুম৷ মহল্লায় মহল্লায় জাগায় জাগায় মহিলা ইফতা বিভাগ৷! এ সব ডং ছাড়া আর কি?  কোন ফায়েদা-ই নেই৷ তালীম তো কুচ্ছ নেহী তালীম কা ডং হ্যাঁ,,,
আবার মহিলা মাদ্রাসায় ছাত্রীবাস! আশ্চার্য! মহিলা মাদ্রাসায় কেন ছাত্রীবাস (দারুল ইক্বামা) হবে?
মহিলারা তো সকালে যাবে আবার বিকালে ঘরে ফিরে আসবে৷ সেখানে থাকবে কেন সেখানে৷ মহিলার তো শিক্ষার বয়স শেয়ানা হওয়ার আগ পর্যন্ত৷(বাচ্চীয়া শেয়ানা হোনে ছে পহলী মাদরাছা ছে তালীম লে, উছকে বা' দ নেহী)
কি হবে তাদের নেসাবে তালীম (?)
একটা ছেলের যদি আলেম হতে সাত -আট বছর লাগে  তাহলে একজন মেয়ের আলেমা হতে হলে চৌদ্দ-ষোল বছর দরকার৷ কারণ মহিলার বুঝ বুদ্ধি পুরুষের অর্ধেক তাদের হেফজ শক্তি পুরুষের চেয়ে কম৷ তাই তো কোরআনের বিধান সাক্ষিতে দুই জন পুরুষ লাগবে৷
আর যদি মহিলা হয় তাহলে একজন পুরুষ আর দুই জন মহিলা সাক্ষি দিবে যাতে একজন ভুলে গেলে অপর জন স্মরণ করে দেয়৷ (বাক্বারাহ)৷
এ ক্বেয়াস চলবে না যে,পুরুষের মিরাছ বেশি মহিলার কম তাই নেসাবে তা' লীমও মহিলার কম সময় লাগবে!
হুজুর সোঃ এর জমানায় মহিলাদের জন্য ভিন্ন নসিহত ও দ্বীনি তা' লীমের ব্যবস্থা হত৷ হযরত বেলাল রাঃ থেকে বর্নিত, হুজুর সোঃ মহিলাদের আবেদনে তাঁদের কে পিছনে বসিয়ে তাঁদের উদ্দেশ্য নসিহত করলেন৷ এবং বেশী করে সদক্বাহ খায়রাত করতে আদেশ দেন৷
এরই ধারাবাহিকতায় ইমাম বুখারী রহঃ তাঁর কালজয়ী অনবদ্য সহিহ গ্রন্থ সহিহুল বুখারীতে বাব ক্বায়েম করেছেন৷''বাবু তা' লীমীর রজুলি আমাতাহু ও আহলাহু''
তাই পুরুষ মহিলা শিক্ষানিয়ম ভিন্ন হওয়া উচিত প্রতি সাপ্তাহে একবার হলে ও মহিলাদের কে নিয়ে ওয়াজ নসীহতের হালক্বা কায়েম করবে, কমপক্ষে মাসে একবার হলেও করবে৷ প্রতিটি শহরে একবার হলেও দ্বীনী নসিহতের হালক্বা করবে এটা  ফায়েদা জনক ও ফলপ্রষু হবে৷
আমি যখন বাহিরে সফরে যাই তখন মহিলাদের জন্য দো-তলা তিন তলায় বসে নসিহত শুনার ব্যবস্থা করি, তখন আমি সামনে কোন পুরুষও রাখি না৷ তাদেরকে বলি মসজিদে গিয়ে বসে শুনুন৷ না হয় কিছুক্ষন পর আমার মনে হবে পুরুষদেরকে ই নসিহত করতেছি৷ মহিলাদের কে যে বলতেছি তা ভুলেই যাব, তাই এরুপ করি৷ আর এটাই ফায়েদা জনক৷
                        --- দরসে বুখারী---
                আল্লামা মুফতী সাঈদ আহমদ 
                         পালনপুরীদ দাঃবাঃ     
         শাইখুল হাদীস ও সদরুল মুদাররীস         
                দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত৷
      
                           -----অনুবাদ---
                  তামজীদুল মাওলা কাসেমি
               শিক্ষার্থী দারুল উলুম দেওবন্দ ৷

                ---ভাষান্তরে প্রেরনার উৎস --
                         সাঈদ আহমদ
               শিক্ষার্থী দারুল উলুম ,দেওবন্দ৷
ومن كان له مرض الشك والوهم وهو مبتلى بالوسوسة فليرجع الي تحفةالقاري ـ المجلد الاول ـ صـــــــــــ  ٣٨٣ـ ٣٨٤ـ٣٨٥

কোন মন্তব্য নেই

nicodemos থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.