দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট


দারুল উলূগম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট…

                 --তামজীদুল মাওলা কাসেমি


দেওবন্দ!

 একটি প্রতিষ্ঠান ই তার আসল পরিচয় নয়৷ দেওবন্দ একটি জাতি গোষ্ঠির সাথে সম্পর্কের কারণে বিশ্বমোড়লে তার পরিচয়৷ অস্তিত্বের প্রান্তি কিনারায় লড়ে যাওয়া স্বাধীনতা চেতনাকামী এক ঝাঁক আলেমের পদদলিত হওয়াই আজও লোক মুখে "দেওবন্দ"৷ বিশ্ব কে আরেকবার তাক লাগানো পরা শক্তির ভীদ কাঁপানো এক কাফেলার ত্যাগে ই দেওবন্দ৷

 দেওবন্দ একটি ইতিহাস একটি সংগ্রাম একটি আন্দোলন৷ দেওবন্দ নামে মাত্র ভেষে উঠে হৃদয় কাবায় এক করুণ ও হৃদয় বিদারক সফল ইতিহাস৷ দেওবন্দী শুধু নির্দিষ্ট কোন জাতি গোষ্ঠির সাথে সীমিত না৷ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অপর নাম ই দেওবন্দী বা ক্বাসেমী৷ এক কথায় মুসলিম উম্মাহর অতন্দ্র প্রহরী ধর্মীয় রাহবার চির সুখের পথনির্দেশক সফলতার অগ্রনায়ক এক জন গোষ্ঠির সংক্ষিপ্ত নাম ওলামায়ে দেওবন্দ৷
উলামায়ে দেওবন্দের পূর্ণ পরিচয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য পেতে হলে একটু পেছনে যেতে হবে৷ খুলে দেখতে হবে ইতিহাসের ঘুনেধরা নির্মম পাতাগুলো৷ বুকে সাহস আর মুখে বল নিয়ে জানতে হবে সঠিক ও সত্য ইতিহাসটুকু৷ তাহলে ই কাসেমী বা দেওবন্দীদের আসল পরিচয় সামনে আসবে৷

 আসলে দেওবন্দ নামটি আজ থেকে ঠিক দেড়শ বছর আগে পুনঃজন্ম লাভ করে৷ ভারতবর্ষের সাহারনপুর জেলার অন্তরগত গত একটি উপশহর দেওবন্দ৷ একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে ই তার পরিচিতির সূচনা৷ ১২৮৩ হিঃ মোতাবিক ১৮৬৬ সালে ১৫ ই মহররম  মোতাবিক পহেলা মে' প্রতিষ্ঠিত হয় একটি মাদ্রাসা৷ এটাই তার মূলে৷ যা আজ দারুল উলুম দেওবন্দ নামে সারা বিশ্বের পরিচিত শব্দ৷

কিন্ত, আসল ব্যক্তিত্ব ও সার্বভৌমত্ব আরো অনেক পেছনে যা জানাও অবশ্যক৷ এতে ই আসল পরিচয় নিহিত৷ আসুন তা জেনে নিই...

১৯৪৭ সাল৷ এই ভারতবর্ষ (হিন্দুস্তান, পাকিস্তান,বাংলাদেশ) স্বাধীনতার মুখ দেখে৷ এর আগেও পরাধীনতার জিঞ্জিরে আবদ্ধ ছিল এই বারের ছগীর৷ কিন্তু ১৯৪৭ সালেই আবার পাকিস্তান স্বতন্ত্রভাবে ছিনিয়ে নেয় তাদের স্বাধীনতা সূর্য৷ আবার ১৯৭১ এর শেষ প্রান্তে পৌছে বাংলাদেশের ভাগ্য খুলে৷ পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে তালিকাভুক্ত হয় আরেকটি পতাকা৷ অর্জিত হয়একটি স্বাধীন দেশ৷ কিন্তু আজ তো সবাই স্বাধীনতার অগ্রনায়ক হিসাবে পরিচিত হতে চায়৷ মুক্তিযুদ্ধাদের তালিকায় নাম লিখাতে চায় অনেকে৷ তবে আসল স্বাধীনতার পয়গাম তো আরো অনেক পেছনে৷ আসুন তা খতিয়ে দেখি৷


সন ১৬০১ খ্রিষ্টাব্দে এ পাক ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম ইংরেজরা অনুপ্রবেশ করে৷ ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে বরতানিয়া থেকে ব্যবসার ছদ্ধবেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নামে এক প্রতারক চক্র আসে৷ তৎকালীন হিন্দুস্তানের হুকুমত ছিল বাদশাহ জাহাঙ্গীরের দখলে৷ সরলমনা জাহাঙ্গীর তাদের মায়াকান্নায় বেশি দিন টিকতে পারল না৷ ইংরেজ তাকে বুঝাতে লাগল এখানের মাল বরতানিয়ায় আমদানি রপ্তানি করে তার লভ্যাংশ হিন্দুস্তানের কল্যানে ব্যয় করবে৷ বাদশাহ জাহাঙ্গীর তাদের ফাঁদে পা দিয়ে হয়ে যায় আবদ্ধ৷ তাদেরকে দিয়ে দেয় অনেক সুযোগ সুবিধা৷ রাতারাতি একেক জন হয়ে যায় অডেল সম্পত্যির মালিক৷ বাদশাহ জাহাঙ্গীর হিন্দুস্তানের বর্গা ভিঘা জমিন তাদের নামে বরাদ্ধ করে দিতে লাগল৷ কিছু দিনের মধ্যে ই ইংরেজরা হয়ে গেলো নব্য জমিদারে পরিণত৷
যাক, কিছু দিনের মধ্যেই তারা এখন হিন্দুস্তানের শক্তিধর ব্যবসায়ী৷ ধনে জনে বিশাল শক্তির অধিকারী৷ একশ বছরের মাথায় তারা শাষন করতে লাগল ভারত বর্ষের বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চল৷ ১৭১৭ সালে মৌসুর প্রদেশ সহ বিভিন্ন এলাকায় তারা রাজত্ব করতে থাকে৷ ১৭৪০-র কথা তৎকালীন সময়ে তারা ভারতবর্ষের একাধিক প্রদেশে হুকুমত খাটায়৷

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কে জানে! এ দিকে আরবী সন ১১১৪ হিঃ মোতাবিক ১৭০৩ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দুস্তানের ঐতিহ্যময় পুরানো শহর দিল্লীর অধিবাসী আঃ রহিমের ঔরষে জন্ম নেয় এক মহান পুরুষ৷ যাকে ইতিহাস শাহ অলিউল্লাহ নামে স্বরণ করে৷ যাকে হাদীসের জগতে মুসনিদুল হিন্দ নামে চিনে৷

যিনি ছিলেন এই উহমহাদেশে সর্ব প্রথম সিহাহ সিত্যাহ র দরস প্রদান কারী৷ ইলমের জগতে যার খিদমত অপরিসীম৷ যার দুরদর্শিতা সর্বজন স্বীকৃত৷ যিনি ছিলেন ইলমে হাদীসে ময়দানে শাহ ছাওয়ার৷ যার অপর্যাপ্ত খেদমতের কাছে মুসলিম উম্মাহ আজো ঋনী৷ তিনি শুধু ইলমের ময়দানে ই নয় বরং তিনি ছিলেন তাক্বওয়া তহারাতে তথা ইলমে বাতিনের ও ইমাম৷ হযরতের অনবদ্য অমরগ্রন্থ ইলম ও হিকমতের সমাহার "হুজ্জতুল্লাহিল বালিগাহ''৷ যার নজীর পূর্বে পরে বলকেহ আজো মিলে নি৷

তিনি উনত্রিশ বছর বয়সে ১১৪৩ হিঃ তে  ইলমের টানে হিজায সফর করেন৷ মক্কা মদীনার শায়েখ মাশায়েখদের থেকে ইলমী তৃষ্ণা নিবারণ করেন৷ তাঁর তৃষিত হৃদয়কে ইলমী সুধা প্রশমিত করেন৷ সেখানে তিনি পূর্ন দুই বছর অবস্থান করে ইলম ও হিকমতে পূর্ণ পন্ডিত্ব অর্জন করেন৷ বিষেশ করে হারামাইনের মাশায়েখদের মধ্যে শায়েখ আবু তাহের মুহাঃ বিন ইবরাহীম কুরদী আল মাদানী রহঃর কাছে সিহাহ সিত্যাহর সব কটি কিতাব ই অধ্যায়ন করেন৷
অতপর স্ব-সনদে ১১৪৫ হিঃ তে দেশে ফিরেন৷ এবং মাদরাসায়ে রহিমিয়াতে দরসে তাদরীসের খেদমতে নিজেকে ধন্য করেন৷ তখনি তিনি বলেছেন হিন্দুস্তান তো ইংরেজদের কব্জায় যাওয়ার বেশী দেরী নাই৷ অদূরেই ভারতবর্ষের শাষন ক্ষমতা ইংরেজরা ছিনিয়ে নিবে ৷ ঠিক ই কিছু দিন পরে ই ইংরেজরা ঘোষনা দিলো "দেশ রাষ্ট্র প্রধানের, আইন আমাদের, হুকুমত কোম্পানির৷ তৎকালীন সময়ে শুধু দিল্লি শহরের দশ হাজারের অধিক মাদ্রাসা বন্দ করে দেয় তারা৷ এই হল শেষ পরিনাম৷
এরই ধারাবাহিকতায় ১৭৩৯ সালে  এই মহাবীর শাহ ওলিউল্লাহর ঔরষে জন্ম নেয় এক মহা মানব ৷ যাকে ইতিহাস শাহ আঃ আজীজ বলে জানে৷ ১৭৬২ সালে তিনি রেখে যাওয়া পিতার মসনদে সমসীন হন৷ ১৭৬৩ সালে ইংরেজ চক্রান্তের গোড়ায় দুর্দর্শিতার দৃষ্টির দেন৷ তখনি তিনি সেই উপলব্ধিতে সফলও হন৷ দেখলেন ভারতবর্ষের অনেক এলাকা ইংরেজদের ক্ষমতায়৷ শাষন আর শোষনের স্ট্রীমরোলার দিয়ে ক্ষমতা দৃড় ও মজবুত করতে লাগল ইংরেজ৷
শাহ আঃআজীজ রহঃ তাঁর বিচক্ষনতায় ১৭৭২ সালে সর্বপ্রথম ইংরেজদের বিরুদ্ধে সাহসি ভূমিকা রাখেন৷ সারা দুনিয়াকে  সত্যের আহবান জানিয়ে ও বিজয়ের ঝান্ডা নিয়ে মাঠে নামেন৷ তাঁর ঐতিহাসিক ফতোয়া ই আজ হিন্দুস্তানের স্বাধীনতার মহা উৎস৷ ধর্মীয় ফতোয়া ই আজকের আযাদীর মূল চেতনা৷ তিনিই নির্ভয়ে দ্বীপ্তকন্ঠে স্পষ্টভাষায় জিহাদ ফরজ হওয়ার ঘোষনা দেন৷

অপর দিকে হায়দার আলীর ঘরে জন্ম নেয় এক  তারুন্যের গৌরব, সিপাহে ইসলামীর অহংকার৷ যিনি আজো সুলতান টিপু নামে খ্যাত ৷ অবশ্যই তাঁর পিতা ছিল ইংরেজী ফাওজের শামিল৷
যখন টিপু সুলতান আজীজী ফতোয়া আর আযাদী চেতনা নিয়ে মাঠে নামলেন৷  জানলেন মুসলমানের উপর জিহাদ ফরজে আইন হয়ে গেছে৷ তিনি ঐসময় মুসলমানদেরকে তবিয়ত ও শিষ্টাচারিতা শিক্ষা দীক্ষায় ছিলেন তরবিয়তি মুরুব্বী৷ তাই তিনি তাঁর তিনশ শিষ্য ও মুসসিম বাহিনী নিয়ে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়েন৷ এটা তো ১৭৯২ এর কথা ৷
 মেরে দোস্ত!
এই সেই টিপু সুলতান যার তাকওয়া-তহারত পুরো দুনিয়া খ্যাত৷ যার কোন দিন এক সাথে ছয় ওয়াক্ত নামাজ কাযা হয় নি৷ যিনি ছিলেন ছাহিবে তরতীব বুযুর্গ৷ তাঁর বুঝুর্গীর কাহিনী কে না জানে! যখন তিনি নিজ শহরে নতুন মসজিদ নির্মান করে৷ ঘোষনা করে দিলেন যার জীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত পাছ ওয়াক্ত নামাজ ক্বাযা হয়নি এমন ব্যক্তি সর্ব প্রথম এ মসজিদের ইমামতি করবে৷ ভরা মজলিস পিন পতন নিরবতার ভূমিকায়৷ কেউ সাহস করতে সক্ষম হয়নি৷ তখন সুলতান টিপু ই নিজেকে আর গোপন করতে না পেরে নিজেই ইমামতি করেন৷ সেই কাহিনী কে না জানে৷
মেরে ইয়ার!!
আজ তো ইতিহাসে বিকৃত হয়ে ঘুনে ধরার পথে৷ ইতিহাস তো সুলতান টিপু কে চিনেও না মনে হয়৷ দুঃখ আর ভগ্ন হৃদয়ে বলতে হয় তিনি ই আযাদী আন্দোলনের মহান পুরুষ৷ তিনি ই তো স্বাধীনতার অগ্রদূত৷ অথচ যুগপৎ ইতিহাস !!?

তিনি কোন দিন দাড়িতে হাত লাগান নাই৷ দাড়ির সুন্নতের উপর ছিলেন সুন্নতের পূর্ন পাবন্দ৷ শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী রহঃ তাঁর মাকতুবাতে লিখেছেন: সুলতান টিপু ছিল একজন তাহাজ্জুদ গুজার তাঁর যুগের কুতুব৷ তিনি রাতকে ইবাদতে অতিবাহিত করতেন৷ সুলতান টিপুর ঐ চিঠি খুলে দেখ! যা তিনি সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহঃ এর কাছে লিখেছেন৷ তিনি লিখেছেন ইংরেজ খতম করে আমি এ ভারতবর্ষে  ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে চাই৷

মেরে দােস্ত!
যখন ইংরেজ বেনিয়াদী আন্দোলন তাদের সফলতায় ব্যার্থতা অনুভব করতে লাগে৷ যখন জমিন তাদের জন্য সংকীর্ন হতে লাগল৷ শক্তি,সামর্থ জ্ঞান,বুদ্ধি হারিয়ে এখন নতুন চিন্তা শুরু করে৷ পলিটিক্যাল পদ্ধতি চ্যাঞ্জ করে নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করতে লাগল৷ ঘুরিয়ে দিল রনকৌশলের মোড়৷ তবে এ পদ্ধতি  মুসলিম উম্মাহর জন্য নতুন নয়৷ মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ পতন আর পরাজয়ের মূল কারণ এটাই বটে৷
আর তা হলো: মুসলিম নেতাদের কে লোভলালসার ফাঁদে বন্দি করা৷ যখনি মুসলিম নেতারা নারী বাড়ী আর গাড়ীর লোভে নেফাকী কে গ্রহন করে তখনি মুসলমানদের পরাজয় তাদের পদচুম্বন করে৷ ঠিক ঐ সময়ে ইংরেজদীর গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ হয় মুসলিম নেতা মীর সাদেক৷ গ্রহন করে নেয় মুসলিম শত্রুতা আর নেফাকী৷ মুসলমানদের গোপন ভেদ ফাঁশ করে শত্রুর কাছে৷
ইংরেজদের পা-চাটা গোলামে পরিনত হয় মীর সাদেক৷ তখনি পরাজয় আসতে লাগে৷ রাতারাতি মীর সাদেক হয়ে যায় নব্য জমিদারে পরিনত৷ নয়শ বিগা জমির মালিক হয়ে যায় মীর সাদেক৷ ইতিহাস তাকে বিশ্ব মুনাফিক হিসাবে চিনে ৷
আর তখনি মুসলমানদের মাঝে দুই গ্রুপ হয়ে যায়৷ একদল ইংরেজদের টাকায় খরিদকরা গোলাম৷ তাদের রক্ষনা বেক্ষনায় নিজেদেরকে শামিল করে৷ তারা মুসলিমদের সাথে গাদ্দারী করে ইংরেজদের সাথে হাত মিলায়৷ তাল মিলিয়ে চলে শত্রুর সাথে৷ অপর দিকে আরেক দল এখন ও সুলতান টিপু রহঃ এর মতাদর্শে বিশ্বাসি৷ আঃ আজীজ রহঃ এর ফতোয়ার উপর শিষাঢালা প্রাচীরের ন্যায় মুসলিম সৈনিক হিসাবে কাজ করে৷

মেরে পেয়ারা ভাইও!
কয়েক দিন না যেতেই ১৭৯৯ সালে সুলতান টিপুকে শহিদ করে দেয়া হয়৷ শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে ধন্য হয় সুলতান টিপু ৷
অপর দিকে গাদ্দার ইংরেজরা ভাবতে থাকে পথের সবচেয়ে বড় বাধা দূর হলো বুঝি৷ এখন তো বিজয় আমাদের৷ জয়ের সুগম পথে এখন আর নেই কোন টিপুর মত মহান নেতা৷ এখনি সফলতার সুবর্ণ সুযোগ৷ আর মীর সাদিকও পেয়ে গেলো নয়শ বিগা জমিন ৷
তারপর নওয়াব সিরাজুদ্দৌলা মুসলিম নেতার ভূমিকায় মাঠে আসে৷ তিনি ই পলাশীর যুদ্ধের মহান নেতা ও বীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা৷ এই পলাশীর যুদ্ধ মোট বাইশ ঘন্টা অব্যহত থাকে৷ এদিকে ইংরেজরা নওয়াব সিরাজুদ্দৌলার সিপাহ সালার মীর জাফর কে অর্থের লোভ দেখিয়ে খরিদ করে নেয়৷ মুসলমানদের সাথে গাদ্দারি করা আরেক মুনাফিককে কাছে পেলো ইংরেজ৷ সে হলো অমিটন৷ এ দুজন কে তারা খরিদ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজে লাগায়৷ আজ পুরা জাতি এক নামে মীর জাফরকে মুনাফিক হিসাবেই চিনে৷
তবে আফছোছ হল সুলতান টিপুর ন্যায় নওয়াব সিরাজুদ্দৌলাও শহিদ হয়ে যায়৷

 এই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য যারা শহিদ হলেন তাঁদের আরেক জন যোগ হল৷ তিনি হলেন নওয়াব সিরাজুদ্দৌলা৷ আর গাদ্দারদেরও অন্তরভূক্ত হলো নতুন দুই মুনিফক৷ মীর্জাফর আর অমিটন৷

মেরে দোস্ত!
তারপর হিন্দুস্তানে কি হতে লাগলো! ভারতবর্ষের পাক ভুমিতে এখন দুই ফেরকা বাস করতে থাকে৷ একদল গাদ্দারদের জামাত দ্বিতীয় গ্রুপ ওফাদার আর নিপিড়িত মুসলিম বাহিনী৷

তারপর নওয়াব সিরাজুদ্দৌলার শাহাদাতের পর ১৮৪০ সালে হিন্দুস্তানের পাঞ্জাব শহর শাষন করে রাজা রঞ্জিত শিং৷ সেও মুসলমানদে উপর করতে থাকে অমানবিক আচরন আর পৈশাচিক নির্যাতন৷ জুলুমের স্ট্রীমরোলার চালায় মুসলিম পরিবারে উপর৷ মুসলমানদের ইবাদতখানা মসজিদ গুলোকে ঘোড়ার আস্তাবলে পরিনত করে৷ তার এই জুলুম সেতম বেরলৌ শহরেও পৌছে যায়৷

 তৎকালিন সময়ে বেরলৌতে একজন আল্লাহর আবেদ বুজুর্গ দরবেশ ছিলেন৷ তিনি আর কেউ নয় তিনি হলেন সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলৌয়ী রহঃ৷
কে এই আহমদ বেরলৌয়ী!
তো বলতে চাই শাহ ওলিউল্লাহর চার ছেলে, শাহ আঃআজীজ ,শাহ আঃ কাদের,শাহ রফিউদ্দীন ,শাহ আঃ গনী৷ সবার বড় শাহ আঃআজীজ রহঃ৷ উক্ত চারো জনই ছিলেন মুফাসসিরে কোরআন৷ চারো ভাই ই মুহাদ্দীস ছিলেন৷ তাঁরা সবাই স্বযুগের কুতুব ছিলেন৷

মেরে দোস্ত! চার ছেলে ছিলো শাহ অলিউল্লাহ রহ: র৷ বড় ছেলের কৃতিত্ব তো সবাই জানে৷ যিনি জিহাদের ফতোয়া দিলেন৷ স্বাধীনতার মহান নায়ক৷ শাহ রফিউদ্দীন আর শাহ আঃ কাদের র. হিন্দুস্তানে সর্বপ্রথম কোরআন তরজুমা ও তাফছির লিখেন৷ আর শাহ আঃ গনী রহঃ এর বড় অবদান হলো তাঁর ঔরষেই জন্ম নেয় এক আল্লাহওয়া বুঝুর্গ৷ তিনি ই হলেন ইসমাইল শহিদ রহঃ৷ আর বুঝার বাকি রইল না ইসমাইল শহিদ রহঃ হলো শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দীসে দেহলবীর দৌহিত্র বা নাতি৷ আর শাহ আঃ আজীজ রহঃএর ভাতিজা৷
সেই সায়্যিদ আহমদ শহিদ রহঃ বেরলৌ থেকে সফর করে দিল্লী যান৷ তিনি শাহ আঃআজীজ রহঃ এর কাছে ইলম ও মারেফাত হাছিল করেন৷ তিনি হযরতের হাতে ও বয়াত গ্রহন করেন৷ অপরদিকে ইসমাইল শহিদ রহঃ ছিলেন সায়্যিদ আহমদ রহঃএর শিষ্য ও মুরিদ৷

 যখন রাজা রঞ্জিত শিং এর জুলুম নির্যাতন দিন দিন বেড়েই চলছে৷ তখন সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহঃ ১৮২৬ সনে  সাড়ে সাতশত মুজাহিদ আর দশ হাজার মুসলিম বাহিনীর বিশাল কাফেলা নিয়ে পাঞ্জাব শহরের দিকে রওয়ানা করেন৷ এর আগে তাঁর কাছের শিষ্য ইসমাইল শহিদ রহঃ কে দূত হিসাবে রাজার কাছে পাঠান৷ শাহ ইসমাইল শহীদ রহঃ এসে শায়েখকে রিপোর্ট দিলেন৷ যে রাজা রঞ্জিত মুসলমানদেরকে দিন দিন নির্যাতন করেই চলছে৷ মুসলমানদের ইবাদতখানা মসজিদ গুলোকে ঘোড়ার আস্তাবলে পরিনত করছে৷ তারপর ১৮২৭ সায়্যিদ আহমদ রহঃ পাঞ্জাব গিয়ে পৌছেন৷ সেখানে গিয়ে শুরু করে দেন যুদ্ধ জিহাদ৷ চলতে থাকে তুমুল লড়াই৷ এক পর্যায়ে বিজয় হয় সেখানকার "পাশাওয়ার"এলাকা৷ বিজীত এলাকায় শাহ ইসমাইল ঘোষনা করে দিলেন আজ থেকে এই এলাকার আমিরুল মুমিনীন হলেন সায়্যিদ আহমদ রহঃ৷ আজ থেকে বিজীত অঞ্চলের সীমানায় চুরি ডাকাতি খুন খারাবী বন্দ৷ নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হল শরাব পান কেও৷
 সময়ের পরিবর্তনে ক্রমাগত ভাবে বিজয় হতে থাকে একের পর এক অঞ্চল ও মহল্লা৷ সমাজে বইতে লাগল শান্তি সুখের হিমেল হাওয়া৷ দিন দিন বাড়তে লাগলো নব মুসলিম সহ শায়েখের মুরিদান৷ ঐ দিকে রাজা রঞ্জিত শিং-র মনে ভয়ে ভিতি ও প্রকম্পিতের ছোট্ট কুটিরে পরিনত৷লদিশামিশা না পেয়ে রাজা শায়খের খেদমতে দূত পাঠায়৷ রাজার দূত এখন শায়েখের দরবারে৷ বলতে লাগলো রাজার পয়গাম৷ আপনার বিজিত অঞ্চল আপনি শাষন করেন সেখানে রাজার কোন ক্ষমতা থাকবে না৷ রাজা তার অঞ্চল শাষন করবে আর তার হুকুমত ও থাকবে সীমিত৷ যুদ্ধ বন্দ রাখুন৷

কিন্তু ইতিহাস সাক্ষি, মুসলমান কোন দিন ক্ষণস্থায়ী ক্ষমতার জন্য জিহাদ করে না৷ তারা একমাত্র রেজায়ে এলাহী আর ই'লায়ে কালিমাতুল্লাহর জন্য নিজের জানের মায়া ছেড়ে আল্লাহর পথে উৎসর্গ হতে জানে৷ রাজার পয়গাম শুনে সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহঃ বলল:
শুনো!

হে বেঈমানের দল! এখানে আমি কোন রাজত্ব করতে আসি নাই৷ আমার হুকুমত করার ও প্রয়োজন নাই৷ হুকুমত করার শাওকও আমার দিলে নাই৷ আমি আসছি স্রেফ একটা জ্বলন আর দরদ নিয়ে৷ তোমরা যখন নিরপরাধী মুসলমানদেরকে পাইকারী ভাবে হত্যা করতে দিধা সংকোচ করছো না৷ মুসলিম শিশু হত্যায় তোমাদের পাষান হৃদয়ও বুক কাঁপছে না৷ জুলুম আর নির্যাতনের সীমা ডিঙ্গিয়ে যখন ছাড়িয়ে গেছ তোমাদের হিংস্র পশুর অমানবিক জুলুম৷

তখনি আমি এসেছি রাসুলে আরাবীর নির্যাতিত উম্মাহর পাশে দাড়াতে৷ বঞ্চিত মানবতার পাশে দাড়াতে৷ আর জিহাদ নামীয় ফরজ বিধান কে আল্লার জমিনে পুনঃবাস্তবায়ন করতে৷

শুনে রাখ!

হে  কাফেরের বাহিনী! যতদিন মুসলিম নির্যাতন বন্দ না হবে৷ না পাবে তাদের হারানো স্বাধীনতা৷ ততদিন আমি লড়েই যাব৷ আর আমার দেহে এক ফোটা রক্ত থাকা পর্যন্ত জিহাদ বন্দ হবে না৷ ইনশাআল্লাহ৷

বেঈমান কাফেরের সাথে কোন ধরনের লেয়াজু নেই৷ এ দেহে রক্ত থাকবে আর ইসলাম ও মুসলমান নির্যাতিত হবে না৷ হতে দিব না৷ দেয়া যাবে না৷

মেরে দোস্ত!
এই হল সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহঃ যিনি কোন সাধারন আদমী নন৷ শাহ অলিউল্লাহর পর জমিন এত বড় মানুষ আরেকজন দেখে নাই৷ যার হাতে চল্লিশ হাজারেরও বেশি মানুষ মুসলমান হয়৷ যার হাতে ত্রিশ লাখ মুসলিম বয়াত গ্রহন করে৷ তাঁরই শাগরিদ ইসমাইল শহীদ রহঃ এর কালজয়ী কিতাব "তাক্বউয়াতুল ইমান" পড়ে  সাড়ে তিন লাখ কাফের মুসলমান হয়৷
মেরে দোস্ত!
শায়েখ সায়্যিদ আহমদ বেরলৌয়ী রহঃ কোন সাধারন মানুষ না৷ কোন শারাবী তাঁকে দেখলে তাওবা করতে থাকে ৷ চোর তাঁর  সোহবতে এসে হয়ে যায় পাক্কা মুসলমান৷
প্রিয় বন্ধু গন!
এই জিহাদে তিনি কখনো কখনো এক জায়গায় ছয় মাস আবার কোন স্থানে এক মাস অবস্থান করে৷ এভাবে তিনি জিহাদ করেই গেছেন৷ জিহাদ করতে করতে ১৮৩১ সনের পহেলা মে' তিনি বালাকোট ময়দানে গিয়ে পৌছেন৷ কিন্ত ভাগ্যের নির্মম পরিহাস৷ সেখানেরও কিছু মুনাফিক দল রাজা রঞ্জিত শিং র বাহিনীর কাছে তাদের খবরাখবর পৌছে দেয়৷ এবং রাজার গোয়েন্দা হিসাবে কাজ করে৷ এদিকে মুসলিম সেনা মুজাহিদের বাহিনীতে জন্ম নেয় এক শ্রেনীর গাদ্দার পার্টি তাগুত৷ অবশেষে পাঁচ ই মে' ১৮৩১ সনে তাহাজ্জুদের সময় সেজদা অবস্থায় সায়্যিদ আহমদ শহীদ রহঃ কে নির্মম ভাবে শহিদ করে দেয়া হয়৷
আজো সেই শহিদের লাশ বালাকোটে মাজার হয়ে আছে৷ স্মৃতির পাতা থেকে বিলিন হয়নি তার কুরবানি৷

অপর দিকে শাহ ইসমাইল শহিদ রহঃ লাগাতার লড়তে থাকেন৷ টানা সাড়ে চার দিন তুমুল লড়াই করে যখন জনৈক শিখ রাসুল সোঃ কে গালি দেয় ইসমাইল শহিদ রহঃ আর সহ্য করতে পারলেন না৷ কসম করে বললেন: ""খোদা কা কসম!  মাই নেহি মরোঙ্গা যব তুজে নেহি মার ডালোঙ্গা""৷
সাড়ে চার দিন লড়াইয়ের পর যখন শত্রু তার দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে চিরতরে শহিদ করে দিলো৷ শরিরের এক অংশ এক জায়গা পড়ে রইল৷ কিন্তু তাঁর শপথ পুর্ণ হয়নি এখনো৷ তখনি ''ইন্না মিন ইবাদিল্লাহি লাও আক্বছামা আলাল্লাহি লা আবাররাহু ''র বাস্তব প্রতিফলন ঘটল৷ আর ইসমাইল শহিদ রহঃ এর অবিস্বরনীয় কারামত প্রকাশ পেলো৷ দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্বেও ঐ শত্রুকে মেরে তাঁর শপথ পূর্ণ করলেন৷
 আল্লাহু আকবর ৷!এমনি ছিলেন তিনি৷

বালাকোট বাজার থেকে এক মাইলের দূরত্বে অবস্থিত ইসমাইল শহীদ রহঃ র মাজার৷ মনে হয় আজো সেখান থেকে তাজা রক্তের গন্ধ পাওয়া যায়৷ ভেষে উঠে ওহুদ পাহাড়ের পূরানো স্মৃতি৷ সে বালাকোট পাহাড়ে প্রায় চারশ মুসলিম শহিদ হয়৷
এটাই সেই বালাকোট৷ ইতিহাস যাকে বালাকোট যুদ্ধ হিসাবে চিনে৷ আর এই মুজাহিদদের কে ই শুহাদায়ে বালাকোট বলা হয়৷ বেচে যাওয়া সামান্য কিছু মুসলিম পরাজয় বরণ করে ফিরে আসেন৷ তাঁদের সংখ্যা ছিল প্রায় একশ জনের মত৷ তাঁদের অন্যতম হলেন জাফর আহমদ থানেশ্বরী,বেলায়েত আলী ও মামলুক আলী এবং ইয়াহয়া আলী সহ (রহ:) প্রমূখ৷

বেঁচে যাওয়া মুসমানরা পরাজয়ের দুঃখ নিয়ে দিল্লিতে মশওয়ারায় বসেন৷ কিন্তু তাঁদের নেই শক্তি বল৷ না আছে জন শক্তি না আছে অর্থ শক্তি৷ অস্ত্র শস্ত্রও শুন্যের কেটায়৷ এমনি এক ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে পরামর্শে বসেন ক্ষুদ্র একটি জামাত৷ কিন্তু স্বাধীনতার চেতনায় ভরা হৃদয় এ কাফেলা কারো কাছে নতজানু করতে জানে না৷



কারো সামনে মাথা ঝুকায় না এঁরা৷ একে একে চৌদ্দ হাজার আলেম কে ফাসির কাষ্ঠে ঝুলানো হল তার পরও নত শির করেন নি৷ এভাবে চলতে থাকে দু-এক যুগ৷

১৮৫৬ সনে দিল্লিতে ভারতবর্ষের সমস্ত বড় বড় আলেম ওলামাদের মশওয়ারা হয়৷ তাদের অন্যতম হলেন৷ এমদাদুল্লাহ মুহাজেরী মক্কী, রশিদ আহমদ গংগুহী, কাসেম নানুতুবী এবং জাফর আহমদ থানেশ্বরী ও হাঃ জামেন শহীদ রহঃ সহ প্রমুখ আলেম ওলামারা৷

মশওয়ারায় কাসেম নানুতুবী রহ. বলেন:

ইংরেজ আমাদের মাথায় উঠে বসে আছে৷ দিন দিন ই তাদের নির্যাতন বেড়েই চলছে৷ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তাদের ক্ষমতা৷ এভাবে যদি চলতে থাকে ভারত বর্ষ সারা জীবন গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ থাকতে হবে৷ তাই যার যা আছে তা নিয়ে এদের বিরুদ্ধে জনমত ঐক্য হয়ে জিহাদ করতে হবে৷

মাঠে নামতে হবে আপন সম্বল নিয়ে৷ না হয় অদুর ভবিস্যতে হিন্দুস্তানের স্বাধীনতা খর্ব হবে, মুসলিম হবে নির্যাতিত৷ মানুষ হারাবে তাঁদের মানবতার জীবণ৷ উক্ত মজলিসে ই জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল৷ হযরত! আমাদের তো লোক সংখ্যাও কম আবার অস্ত্র স্বস্ত্রও না থাকার মত? কিভাবে লড়োব স্বশস্ত্র বাহিনীর মোকাবিলায়?

 হযরত নানুতুবী রঃ বজ্র কন্ঠে স্পস্ট ভাষায় বলে দিলেন: স্বরণ করো সে সময়কে, "বদরের মুজাহিদরা কি আমাদের চেয়ে কম ছিল না! তাঁদের অস্ত্র কি ই বা ছিল! জিহাদ চলবেই চলবে৷ জিহাদ কোন দিন অস্ত্রের মুক্ষাপেক্ষি না৷ যার যা আছে রনটণক্ষেত্রে ঝাপিয়ে পড়ো৷

শুরু হয়ে গেলো জঙ্গে আযাদী৷ স্বাধীনতা আন্দোলন৷ হিন্দুস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুটি যুদ্ধ হয়৷ এক:  ১৮৫৭তে আযাদী আন্দোলন৷ যার মহান নায়ক ছিলো মুহাজিরে মক্কী রঃ এর শাগরিদ ক্বাসেম নানুতুবী রহঃ৷ যে যুদ্ধে কাসেম নানুতুবী খোদ নিজেই আঘাত প্রাপ্ত হন৷ এবং আহত হন রশিদ আহমদ গংগুহী র. ও তাঁর শায়েখ মুহাজিরে মক্কী রহঃ সহ অনেকে৷ দুই: রেশমি রুমাল আন্দোলন যার মুলে আছেন নানুতুবী রহঃ এর শাগরিদ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী৷ যাকে মানুষ শাইখুল হিন্দ হিসাবে চিনে৷


কিন্তু আফছোছ এ আযাদী আন্দোলনেও বিজয় আসল না৷ এ জঙ্গে আযাদী দুটি স্পটে বিভক্ত ছিলো৷ এক ছিলো জাফর আহমদ থানেশ্বরী রহঃ এর নেতৃত্বে আম্বালাতে৷ আরেক ছিল শামেলীতে ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর নেতৃত্বে৷

কিন্তু ভাগ্যের লিখন কে পারে মুছাতে! অবশেষে পরাজয় ই পদ চুম্বন করল!
এভাবে চলতে থাকে জুলুম সেতম আর নির্যাতনের স্ট্রীম রোলার৷ ভিটেমাটি ছাড়া এই পবিত্র জামাত প্রতিনিয়ত ই শিকার হয় নির্যাতন আর লাঞ্চনার জীবনে৷ তবুও নত হন নি কোন তাগুতের কাছে৷ মাথা নত করে নি বেঈমান কাফেরের সামনে৷

বিজয়সূর্য ছিনিয়ে নেয় ইংরেজ৷ দিনদিন ই বাড়ছে ওলামাদের কষ্টের জীবন৷ বরতানীয়ার নেতা তখনকার  অফিসার রিপোর্ট নিতে লাগলো৷ তাদের উযির ও মন্ত্রীসভাকে তলব করে জানতে চায় হিন্দুস্তানের অভ্যন্তরীণ অবস্থা৷ মন্ত্রীসভা ও তাদের দলীয় নেতারা যে যে রিপোর্ট দেয় তা বহুত বড় আজীব গরীব রিপোর্ট! তৎকালীন সময়ের বিজ্ঞ রাজনিতিবীদ ড. অলীম বলেন: সমস্ত উযীররা একটা ই রিপোর্ট দিলো৷ যে, হিন্দুস্তানের মুজাহিদ বাহিনী অনেক মজবুত৷ স্বাধীনতার চেতনায় তাঁরা উজ্জীবিত প্রান৷ এর মূল কারণ হল হিন্দুস্তানের মুজাহিদরা মুসসমান৷ এদের অন্তরে জিহাদী চেতনায় ভরপুর৷ এদের নেতৃত্বে আছে হিন্দুস্তানের মৌলভীরা৷ এরা জিহাদ কে নিজের জন্য গৌরব মনে করে৷ এদের তামান্না হলো শাহাদাত বরন করা৷ শাহাদাতের মৃত্যুকে এরা জীবনের মহা সফলতা মনে করে৷

এই জামাতের আলামত বলতে গিয়ে বলেন৷ এরা হলো মুখ ভরা লম্বা দাড়ী আর গায়ে লম্বা পাঞ্জাবী৷ হিন্দুস্তান কে দখল করতে হলে প্রথমে এদের অন্তরে জিহাদের ঘৃণা জন্মাতে হবে৷ আর ওলামাদের কে দুনিয়া থেকে চিরতরে মুছে দিতে হবে পৃথিহবীর মানচিত্র থেকে৷ তাদের নাম গন্ধ মিটিয়ে দিতে হবে দুনিয়ার বুক থেকে৷ তাহলে ই কিছু আশা করা যায়৷ আর না হয় ইংরেজ পরাজয় বরণ করতে বাধ্য৷ ভারতবর্ষ দখল করাও সম্ভব না৷

এর পরেই শুরু হয় জুলুম নির্যাত৷ ১৮৬১ সনে এক সাথে তিন লাখ কোরআন শরিফের কপি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়৷ শুধু তা ই নয় চৌদ্দ হাজার আলেম ওলামাকে এক সাথে ফাসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়৷ দিল্লী থেকে খায়বারে গ্রান্ড ট্রাংক রোডের (জিটি রোড) পাশে এমন কোন গাছ ছিলো না যার সাথে আলেম ওলামাদের লাশ ঝুলানো ছিল না৷

ইতিহাসবীদ থিমসন বলেন: এমন কোন নির্যাতন নাই যা ভারতবর্ষের আলেম ওলামাদের উপর করা হয়নি৷ ইংরেজরা মৌলুভীদের লাশ কে শুকোরের চামড়া দিয়ে আবৃত করে রেখে ছিলো৷ তিনি আরো বলেন:জ্বলন্ত আগুনে গরম তৈল ফুটানো হত৷ আর সেখানে নিক্ষেপ করা হত তাজা জেন্ত আলেমদেরকে৷


 একজনের সামনে আরেক জন কে ফুটন্ত তৈলে সরাসরি নিক্ষেপ করা হয়৷ তারপরও কেউ মাথা নত করে নি৷ ১৮৬৪ থেকে ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত ইতিহাসের নির্মম হতাযোজ্ঞ কাজ করে ইংরেজরা৷ আর ওলামায়ে হিন্দ হয় জুলুম নির্যতনের শিকার৷সেটাই ভারতবর্ষের সবচেয়ে বেশি শোক ও দুঃখের বছর ছিল৷

এর পর ভিটে মাটিহীন ওলামায়ে কিরাম দ্বীনে রক্ষার জন্য ১৮৬৬ দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করে৷ দেওবন্দ এলাকায় সাহারনপুর জেলায়৷

সংক্ষিপ্ত তাকরির: আল্লামা জিয়াউর রহমান ফারুকি র. পাকিস্তান৷

রাইটডেট: ৯ নভেম্বর ২০১৭ ঈসায়ী৷

1 টি মন্তব্য:

nicodemos থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.