আকাবির চরিত পর্ব: দুই
মাওলানা ইউসুফ তাওলবী দাঃ বাঃ এর
সংক্ষিপ্ত জীবনী ৷
লেখক :মিজানুর রহমান ৷শিক্ষার্থী: দারুল উলুম দেওবন্দ ৷
মুফতি ইউসুফ তাওলবী সাদামাটা, সরল, বিনম্র, ইলমপ্রিয়, ছাত্রবৎসল একজন মহান ব্যক্তিত্বের নাম ৷ বিনীদ্র রজনীর অদম্য সাধনা, নিরন্তর মেহনত, তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী৷ সূক্ষাতিসূক্ষ জটিলতার সমাধান, জ্ঞান গর্ভ রচনা, গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ, আধ্যত্মপূর্ণ আলোচনাসমগ্র জাতিকে উপহার দেওয়াই যার লক্ষ্য ও উদ্যেশ্য ৷ তাফসীর, হাদীস, ফিকহ, আকাঈদ, হিকমাহ, ফালসাফা সহ অন্যান্য শাস্ত্রের পেঁচালো ও জটিল তম মৌলিক বিষয়াদীর সরল সমাধানে যিনি অনন্য, বেনযীর ৷
প্রখর মেধার অধিরারী ৷ সুল্লাম, মুসাল্লামুস সুবুত, শরহে জামী, কাফিয়া, হিদায়াতুন্নাহব সহ বহু দরসী মতন ও শরাহ তাঁর কণ্ঠস্থ ৷
জীবনের ঊষালগ্ন থেকে শুরু করেছেন নিরন্তর সাধনা ৷ অবিরাম অধ্যায়নে বিলীন করেছেন নিজেকে ৷ সাফল্য, বৈচিত্রময় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে নিজেকে বিকিয়ে দিচ্ছেন রাতকে রাত ৷
ফলে উম্মাহর সামনে একের পর এক পেশ করে যাচ্ছেন জ্ঞানগর্ভ বহু নযরানা আর দূর্লব ইলমী তুহফা ৷
নাম ও জন্ম :
ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফ্ফর জেলাধীন তাওলী গ্রামে পিতা জনাব আব্দুল আযীমের ঔরসে একটি সম্ভ্রান্ত শিক্ষানুরাগী পরিবারে 1375 হিজরী সনে জন্ম গ্রহন করেন ক্ষণজন্মা কিংবদন্তি কালজয়ী এ মহামানুষটি ৷
নাম করণ :
জন্মের আগের রাতে তাদের পরিবারে মেহমান ছিলেন বিশ্বনন্দিত খ্যাতনামা আলেমেদীন হযরত ইউসুফ কান্দলবী (রহঃ) ৷
যেহেতু হযরতের সুদৃষ্টি আর বিশেষ দোয়ার বরকতে তাঁর জন্ম, এজন্য পিতা- মাতা নাম রেখেছেন ইউসুফ ৷
শিক্ষাজীবন :
পিতা-মাতার স্নিগ্ধ ছায়ায়, নিপুন তত্বাবধানে মাত্র এগার বছর বয়সে তিনি হিফজুল কুরআন সমাপ্ত করেন ৷ অল্প কয়েক বছরে ইবতিদায়ী, মাধ্যমিক, শিক্ষা সমাপ্ত করে উপমহাদেশের অন্যতম বিদ্যাপিঠ দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন ৷
তাঁর উল্লেখযোগ্য আসাতিযায়ে কিরামের মধ্যে অন্যতম হলেন হাকিমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত আশরাফ আলী থানবী রহ: এর সুযোগ্য খলীফা, দারুল উলুমের প্রাক্তন মুহতামিম, হাকীমুল ইসলাম কারী তৈয়ব সাহেব (রহ:) ও মাওলানা নাঈম আহমদ (রহ :) ৷
*************
★★ বর্ণাঢ্য কর্মজীবন : ইলম ও আমলের পরম আলোক বর্তিকা এ মহা মণীষী কৃতিত্বপূর্ণ ছাত্র জীবন শেষ করেই ঈর্ষণীয় আগ্রহ নিয়ে কর্ম জীবনে আত্মনিবিষ্ট হন ৷ প্রথম তিন বছর মুজাফ্ফর নগরের উপকণ্ঠে অবস্থিত জামিয়া মুরাদিয়ায় সাফল্যের সাথে পাঠদান করেন ৷ এরপর কয়েক বছর দারুল উলুম আমরোহায় মুসনাদে হাদীস অলংকৃত করেন ৷ অবশেষে 1406 হিজরী তে দারুল উলুম দেওবন্দে যোগদান করেন ৷ বর্তমানে তিনি দারুল উলুমে সিনিয়র মুহাদ্দিসের পদে কর্মরত আছেন ৷ খন্ডকালীন সময় প্রধান শিক্ষাসচিব ছিলেন ৷ পাশাপাশি তিনি একটি দারুল ইফতার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক ৷
***********
★★ বাইয়াত ও ইজাযত : যুগখ্যাত এ আলিমে দীন 1395 হিজরীতে যুগপৎ ইলম ও আমলের সমন্বয়কারী, আধ্যাত্বিক প্রাণপুরুষ, ফকীহুল উম্মাহ মুফতি মাহমুদুল হাসান গাঙ্গুহী রহ: এর সঙ্গে ইসলাহী সম্পর্ক গড়ে তুলেন ৷ প্রিয় শাইখ ফকীহুল মিল্লাতের কাছে নিজের সবটুকু উজাড় করে দেন ৷ শিষ্যের অসাধারণ প্রতিভা আর যোগ্যতা দেখে ধীরে ধীরে মাওলানার তাঁর ভরসা জন্মে ৷ তাই 1405 হিজরী-তে মাজাহেরুল উলুম সাহারানপুরে শাইখ তাঁকে ইজাযত প্রাদান করেন ৷
***********
★★ রচনা সমগ্র : মাওলানা ইউসুফ তাওলবী ধ্যানে-জ্ঞানে অসাধারণ, বিরল ব্যক্তিত্ব ৷ তাফসীর, হাদীস, উলুমুল হাদীস, ফিকহ, আকাঈদ, মানতিক-ফালসাফা, কাব্যরচনা প্রভৃতি বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ৷ সব বিষয়েই কলম ধরেছেন ৷ এছাড়াও দরসে নিযামীর সিলেবাসভুক্ত
বহু কিতাবের ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখেছেন ৷ সব মিলিয়ে তাঁর রচিতগ্রন্থ অর্ধশতাধীক ৷ তাঁর অনন্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে --
1- বাদাঈউল কালাম ফি বয়ানি আকাঈদিল ইসলাম ( আরবী)
শরহে আকাঈদ, আকীদাতুত তাহাবী, শারহুল মাওয়াকিফ, শারহুল মাকাসিদ, সহ নির্ভরযোগ্য কিতাবাদীর আলোকে রচিত দালীলিক বিশ্লেষন সমৃদ্ধ ইলমুল কালামের অনবদ্য সংকলন ৷ যা মুফাস্সির, মুহাদ্দিস, ফকীহ, সুফী, আলিম, তালিবে ইলম, সকলের সংগ্রহে রাখার মত ৷
2-তানকীহুল আফকার ফি তাহকীকি ইসবালিল ইযার ( আরবী)
এটি মাওলানার রচিত প্রথম কিতাব ৷ যা সমকালীন একজনের ইসবালুল ইযারের মাসআলায় মনগড়া ফতোয়ার খন্ডন ৷ যাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সবিস্তারে আলোকপাত করা হয়েছে ৷
3- আল ফাতাওয়াল ইউসুফিইয়াহ( উর্দূ) এটি হযরতের দৈনন্দিন জীবনে যাবতীয় সমস্যা সমাধানে প্রদত্ব ফতোয়া সংকলন ৷ যা দৃষ্টিনন্দন কলেবরে ছয় খন্ডে ছেপে পাঠক মহলে বিপুল সামাদৃত হয়েছে ৷
পাঠ্যপুস্তকের ব্যাখ্যাগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: আল কালামুল মুসাওয়া লি হাল্লি মাফিল মুআত্তা লিল ইমাম মালিক ( আরবী), উমদাতুত দুরার শরহু নুখবাতিল ফিকার (উর্দূ) , আশরাফুল হিদায়া (উর্দূ ভাষায় হিদায়া চতুর্থ খন্ডের শরাহ)
জাওয়াহিরুল ফারাঈদ শরহু শরহিল আকাঈদ ( উর্দূ), আল কালামুল মুনাযযাম ফি তাওযিহী মাফি সুল্লাম, জাওয়াহিরুল বালাগাহ, দরসে মুন্তাখাবুল হুসামী, আত তা’লীক আলাল আশবাহি ওয়ান নাযাইর ( আরবী), ফায়যুল কাবীর শরহুল ফাওযিল কাবীর ৷
ইমদাদুন্নাহব, ইমদাদুস সরফ, ইমদাদুল মানতিক, ইমদাদুত তাজবীদ তাঁর বিরল কৃতিত্বের সাক্ষী ৷
************
দরস-তাদরীস, ফতোয়া প্রদানের পাশাপাশি বাতিল ফিরকা মওদূদী মতবাদ, আহলে হাদিস ফিরকা, শিয়া, বেরেলভি ফিরকাগুলোর ভ্রান্ত মতবাদ নিরসনে তাঁকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের প্রতীকি মশাল বললে মোটেই বাড়াবাড়ি হবেনা ৷ এ ক্ষেত্রে তাঁর গভীরতা একটি ঘটনা থেকে সহজে অনুমেয় ৷
একবার মুযাফ্ফর নগরের একটি গ্রামে জনৈক নিজেকে মুজতাহিদ দাবি করেছিল ৷ বিশ্বব্যাপী আলেম সমাজকে তার সাথে বিতর্কের আহবান করে নানারকম চ্যালেঞ্চ করছিল ৷ লোকজন হতাশ হয়ে মাওলানার কাছে পরামর্শের জন্য আসলে মাওলানা নিজেই তৈরি হন ৷ মাওলানার জ্ঞানগর্ভ আলোচনা, মজবুদ যুক্তির সামনে তাকে হার মানতে-ই হল ৷ মূল পর্বে প্রবেশের আগে -ই মাওলানা তাকে ঘায়েল করে নিলেন ৷ চরম ভাবে পরাজয় বরণ করল মিথ্যুক মুজতাহিদ ৷ আজ অবধি বত্রিশ বছর হয়ে গেল তার নাম -ও শুনা যায়নি ৷
**************
নিভৃতচারী জ্ঞানসাধক, ভূতপূর্ব মুহাদ্দিস, পরম শ্রদ্ধেয় উস্তাদে মুহতারাম, মাওলানা দাঃ বাঃ এর দীর্ঘ নেক হায়াত কামনায়।
মিজানুর রহমান ৷
শিক্ষার্থী: দারুল উলুম দেওবন্দ ৷
কোন মন্তব্য নেই