স্মৃতির পাতায় আরেকটি নাম

 

স্মৃতির পাতায় আরেকটি নাম,,
       তামজীদুল মাওলা কাসেমি


  আযিযো!
 দেওবন্দিয়্যাত কি হেফাজত করো৷
   --হযরতুল উস্তায পালনপুরী দাঃবাঃ

  শরির স্বাস্থে সুঠোম দেহের অধিকারি, প্রসস্ত ললাটে আর ডিমাকৃতির গোলাকার চেহারা, লাল দাড়ি লাল কেশে সুশোভিত, লম্বা কাঠামো ও সরু নাক আর হরিনী চোখ বিশিষ্ট কালজয়ী কিংবদন্তী এক মহান পুরুষ৷ জবানে স্পষ্টতা ও সততা আর বাকপটুতা, চাহনিতে মায়াবী ইছলাহ আর পরোপকারিতা,দৃষ্টিতে তীক্ষ্মতা ও বিচক্ষনতা,চলনে বলনে নম্রতা আর ভদ্রতা এমন বহু গুনে গুনান্বিত এক বীর পুরুষ৷
  যার কদমে কদমে সুন্নতের অনুসরন, আকাবির আসলাফের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ভালবাসা অার পূর্ন পায়রুবি,আযমতে সাহাবার ক্ষেত্রে পূর্ণ সচেতন দেওবন্দীয়্যাতের চলমান স্তম্ভ ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের তরজুমান এবং ফিকহে হানাফির ভাষ্যকার৷ তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন হযরাতুল উস্তায সাঈদ আহমদ পালনপুরি যিঃমাঃ৷

  জীবনে অনেকে অনেকের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি করে৷ ইফরাত তাফরিতের ফাঁদে আবদ্ধ হয় অনেকেই৷ মোবালাগা করা থেকে খুব কম মানুষ ই রেহাই পায়৷ গুন বলেন আর দোষ বলেন আমি ও কিন্তু এর থেকে মুক্ত নই৷ তবে দৃড় ইচ্ছা করলাম কমপক্ষে আজকে কোন মোবালাগা বা বাড়াবাড়ি করবো না৷ শুধু বাস্তবতা কে ই তুলে ধরবো ৷ আসল কথা হল যারা বড়, যাদেরকে আল্লাহ নিজের দয়া ও ফজলে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন ৷ তাদের ক্ষেত্রে কিষের আবার বাড়াবাড়ি?! তাঁরা তো আল্লাহর নেয়ামতের মাজহার মাত্র৷ আল্লাহর কুদরতের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছুই নয়৷ খোদা-দাদ যোগ্যতা আর কামালিয়্যাতের সাথে কসবি পন্ডিতির টক্কর চলে নাকি আবার !
  হযরতের দরসের সু-নাম কে না জানে৷
জগৎবিখ্যাত দরসি আন্দায৷ কঠিন থেকে
কঠিনতর বিষয়কে অতি সহজে সুসংক্ষিপ্ত আকারে ছাত্রের সামনে পেশ করা শায়েখের বহু গুনের মাঝে এক অন্যতম বৈশিষ্ট৷ একই মজলিসে লাগাতার দুই আড়াই ঘন্টা বিরামহীন ভাবে দরসি তাকরির করেই যান৷ পূর্ন মজলিস থাকে কানায় কানায় ভরপূর৷ পিন পতন নিরাবতনের এক অপূর্ব নজির৷ কারো মাঝে নেই কোন ক্লান্তি নেই কোন বিরক্তির ভাব৷ পূরাে মজলিস ই চুপ-চাপ  মনে হয় শ্রোতার মাথায় কোন পাখি এসে নিরাপদের সাথে বসতে পারবে৷  মুহুর্তের মাঝে শেষ হয়ে যায় এত দীর্ঘ সময় ৷সেটাতো একমাত্র মহান রবের দয়া আর বিশেষ ফজিলত ছাড়া বৈ কি ৷
 
 একেক দিনের তাকরিরে  ভিন্ন ভিন্ন একেক ধরনের সু ঘ্রান ৷ ইলম ও হেকমতের সমাহার পূরা দরস ই৷ উসূল আর  বাস্তবত যৌক্তিতে সোনায় সোহাগা হযরতের প্রতিটি বানী৷ বলতে গেলে এক বে-নজীর ব্যক্তিত্বের  অসাধরন গুনাবলীতে পূর্ন কামালের অধিকারি এক চলমান আকাবির৷
 
  প্রাচীন ঐতিহ্যের ইলমী শহর হিন্দুস্তানের গুজরাট প্রদেশের  পালন পুর গ্রামে বাবা ইউসুফের ঔরষে এক মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয় এই কালজয়ী ক্ষমজন্মা মহান পুরুষ৷ হযরতে জন্ম তারিখ নির্দষ্ট ভাবে মাহফুজ নেই ৷ কিন্তু পারিবারিক ভাবে তার জন্ম তারিখ  ১৩৬০ হিঃ সন ধরা হয়৷আর এমনি আন্দায করেন হযরতের ওয়ালিদে মোহতারাম৷ বাবা মৌলুবী  ইউসুফ রহঃ র কাছে প্রাথমিক শিক্ষা দীক্ষা অর্জন করেন৷ তিনি শুরুতেই তাকে গ্রামের মক্তবে ধর্মীয় তালীম তরবিয়তের জন্য বসিয়ে দেন৷ তাঁর বাবা ছিলেন ইবনে হাজরে হিন্দ আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহঃ এর খাছ শাগরিদ বদরে আলম মিরাঠি রঃ এর শিষ্য৷ তিনি ছিলেন গুজরাটের ডাবিল মাদ্রাসার ছাত্র৷ ঐ সময় উক্ত মাদ্রাসায় আল্লামা শিব্বীর আহমদ ওসমানী এবং ইউসুফ বিননূরী রহঃ এর মত মহান মনিষী গন দরস তাদরীসের খেদমত করতেন৷
  পিতা ইউসুফ রহঃ ও মোহতারামা  আম্মাজান তাঁর নাম রাখেন "আহমদ"৷ এর পিছনে রয়েছে একটা উদ্দেশ্য৷ আর তা হল৷ হযরতের একজন মা শরিক ভাই ছিল যে শৈশবকালে মারা যায়৷ আর তার নাম ছিল আহমদ তাই তার স্বরনকে তাজা রাখার জন্য তাঁর নাম ও আহমদ রাখা হয়৷ পরবর্তিেত নিজেই নিজের নামের সাথে সাঈদ যোগ করেন ৷ এখন হযরতের নাম সাঈদ আহমদ ৷ কর্ম জীবনের শুরুতে নিজের নামের সাথে বাপের দিকে নেসবত করে ইউসুফী যোগ করেন ৷পরবর্তিতে কোন এক কারনে নামের সাথে নিজের জন্মস্থান পালনপুর এর দিকে নেসবত করে পালনপুরী বলা হয়৷ এখন পর্যন্ত সাঈদ আহমদ পালনপুরী ই বলা হয়৷

--- মাজাহেরুল উলুম সাহারানপুর দাখেলা

  প্রথম থেকে তিনি পালনপুর নিজ এলাকায় পড়া শুনা করেন৷ পরবর্তিতে তিনি ১৩৭৭ হিঃ তে সাহারানপুরের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ যার সুনাম সুখ্যাতি দেশে বিদেশে কম নয়৷ অবশ্যই মাযাহেরুল উলুম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার বছর ই হয় ৷ তবে দারুল উলুম প্রতিষ্ঠা হয় মহররমের ১৫ তারিখে আর মাজাহেরুল উলুম প্রতিষ্ঠা হয় রজব মাসে ৷ পালনপুরেই তিনি শরহে জামী পর্যন্ত পড়া শুনা করেন৷ তারপরে তিনি মাজাহেরুল উলুম সাহারনপুরে ভর্তি হন৷ সেখানে তিনি তিন বৎসর গভীর অধ্যায়ন করেন৷ তিনি মুফতি ইয়াহইয়া সাহারানপুরী ও  মাওলানা ইয়ামীন সাহেব এবং ইমামুন নাহব ওয়াল মান্তেক সিদ্দীক আহমদ রহঃ প্রমূখ মহামনিষীর কাছে বিভিন্ন ফন্নী বিষয়ে পড়া শুনা করেন ৷


   --- দারুল উলুম দেওবন্দে দাখেলা
 তারপরে ই হযরতের ভাগ্য খুলে১৩৮০ হিঃ তে দারুল উলুম দেওবন্দে জালালাইন জামাতে ভর্তি হন৷ সেখানে ও তিনি  অত্যান্ত সুনাম সুখ্যাতির সাথে গভীর অধ্যায়নে নিজেকে ধন্য করেন ৷ সময়ের করেছেন যথাযথ মূল্যায়ন৷ জীবনের শুরু থেকে ই তিনি ছিলেন প্রখর মেধার অধিকারী৷ ইশকে নবীকে লালন করেন বুকের গহীনে৷ সেখানে তিনি হযরত নাছির আহমদ খান সাহেব রহঃ এর কাছে  তাফসিরে জালালাইন সহ ফাউযুল কাবীর ইত্যাদি কিতাবাদি পড়েন৷ পরবর্তিতে তিনি ১৩৮২ হিঃ তে তাকমীল জামাতে দাওরার সিহাহ সিত্যাহ পড়েন৷

 ---দারুল ইফতায় ভর্তি ৷
  বাবার ইচ্ছা ছিল সাঈদ আহমদ শুধু আলেম হয়ে দ্বীনের খেদমত করবে৷ সেখান থেকে তো কোন বেতন ইত্যাদি পাবে না৷ তাই জীবিকা উপার্জনের জন্য ভিন্ন পেশা বেছে নিবে ৷আর তা হল হাকীম হয়ে দরস তাদরীসের পাশাপাশি জীবিকা উপার্জন করবে৷ তাই বাপের ইচ্ছা ছিল সে জামিয়া তিব্বিয়া, দেওবন্দে ভর্তি হোক৷ কিন্তু হযরত তো ইলমের পাগল ৷ স্বাদ পেয়েছেন কিতাব অধ্যায়নে৷ তাই তিনি বাড়ী থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসেন দেওবন্দে৷ এসে ১৩৮৩ তে দারুল উলুমে শুয়বায়ে ইফতাতে ভর্তি হন৷ তৎকালীন সময়ে দারুল উলুমের প্রধান মুফতি ছিল সায়্যিদ মাহদী হাসান সাহেব রহঃ৷ হযরতের মোতালায়া বা অধ্যায়নের  অগাধ আগ্রহ দেখে পরবর্তি বছর তাঁকে দারুল উলুমের মুঈনে মুফতি হিসাবে দারুল উলুমে রেখে দেয়৷ এর আগে কিন্তু দারুল উলুমের মুঈনে মুফতি র পদে নিয়োগ পদ্ধতি ছিল না৷

  --- হাফেজ হওয়ার অাগ্রহ
 শৈশব কালে হযরত হিফজ পড়েন নাই৷ কিন্ত অন্তরের গহীনে লালন করেছে এক স্বপ্ন৷ শুধু স্বপ্ন ই দেখেন নাই বরং তা পরিপূর্ন করে বাস্তব রুপ দিয়েছেন৷ তাই তিনি ইফতার বছর ই দারুল উলুম দেওবন্দের এক উস্তাদ যাকে মিশরের জামিয়া আযহার থেকে আরবি পড়ানোর জন্য পাঠানো হয়েছে৷ তিনি ছিলেন হাফেজ কারী এবং হানাফি মাযহাবের কঠিন মুকাল্লিদ ৷ যার কথা পালনপুরী দাঃ বাঃ আজো দরসে বলে থাকেন৷ হযরত বলেন যতগুলো নেক আদমি দেখেছি তিনি ও তাঁদের মধ্যে একজন৷ আর তিনি হলেন৷ আল্লামা মাহমুদ আঃ ওয়াহহাব কুঃ সিঃ৷
এই হযরতের কাছেই ইফতার বছর হেফজ পড়া শুরু করেন৷ ইফতার মোতালায়ার সাথে সাথে দেড় বছরের মাথায় তিনি পূর্ন কোরআন হিফজ শেষ করেন৷

----দারুল উলুম আশরাফিয়া, রান্দীর  খেদমত৷
 তারপর হযরত ইফতা শেষ করে ৷ হযরত রান্দীর শহরে দারুল উলুম আশরাফিয়াতে দরসি খেদমত আঞ্জাম দেয়৷ সেখানে যাওয়ার সময় হযরতের মাখদুম ইমামুল মা'কুল ওয়াল মানকুল আল্লামা ইবরাহীম বালয়াবী রহঃ তাঁকে একটি ভবিষ্যৎ বানী
দেয় যা নয় বছর পর পরিপূর্ন ভাবে বাস্তবায়ন হয়৷ আর তা হল
مولوي صاحب! گبھراؤ نہیی، اس سے اچہے آوے گی
 মৌলুবী চিন্তা করো না আল্লাহ এর চেয়ে উত্তম বদলা দিবে৷ পরে তিনি আশরাফিয়া সিনিয়র উস্তাদ হিসাবে দ্বীনি খেদমত আঞ্জাম দেয়৷ সেখানে তিনি সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী,তিরমিজী মোয়াত্তাইন ইবনে মাজা মিশকাত ইত্যাদি হাদীসের কিতাবাদি সহ অনেক কিতাবের ই দরস প্রদান করেন৷ সেখানে তিনি নয় বছর খেদমত করেন৷ ঐ সময় থেকে ই তিনি লেখালেখি করেন৷ দারুল উলুম আশরাফিয়াতে থাকাকালিন সময়ে তিনি শায়েখ মুহাম্মাদ বিন তাহের পাটনী রহঃ এর কিতাব আল মুগনী র আরবী শরাহ "তাহযীবুল মুগনী" লিখেন৷ যা এখনো প্রকাশ হয়নি ৷

---দারুল উলুম দেওবন্দে তালীমি ও তাদরিসী খেদমতে নিয়োগ

 ১৩৯৩ হিঃ তে হযরতের মোহতারাম উস্তায মাওঃ মুহাম্মাদ হাশেম রহঃ তাঁকে চিঠির মাধ্যমে জানান যে দারুল উলুম দেওবন্দে উস্তাদের একটি পদ খালি৷ একজন ওস্তাদ লাগবে তুমি ইচ্ছা করলে দরখাস্ত দিতে পার৷ অবশ্যই তিনি দারুল উলুম আশরাফিয়ার উস্তাদ ছিলেন পরে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের ওস্তাদ হয়৷ পরে হযরত এই খবর শুনে হযরতে অন্য ওস্তাদ মাওঃ সা'দ রশিদ আজমিরী রহঃ এর পরামর্শে রজব মাসেই দারুল উলুমে দরখাস্ত করে ৷ তখন শা'বান মাসে দারুল উলুমের শুরা সদস্যের মোশওয়ারায় আল্লামা মঞ্জুর আহমদ নোমানি রহঃ হযরতের নাম প্রস্তাব করেন৷ ঐ মজলিসেই সিদ্ধান্ত হয় তিনি দারুল উলুমের ওস্তাদ ৷ পরবর্তিতে তাঁকে জানানোর পর তিনি রমজান মাসেই চলে আসেন ৷ তারপর থেকেই তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের উস্তায৷

     ---একদিনের ঘটনা
 ছোট থেকে তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তরভুক্ত৷ একদিন হযরত বুখারির দরসে হযরত খিজির আঃ এর আলোচনা করতে গিয়ে বলেনঃ খিজির আঃ এর ব্যাপারে ভিবিন্ন মতামত পাওয়া যায়৷ বাকি আমার খেয়াল হল তিনি হলেন রিজালুল গায়েব বা মালাইকাতুল আরদ্ এর অন্তরভুক্ত৷ অর্থাৎ তিনি জমিনের ফেরেস্তা৷ তাঁর উদাহরনে হযরতের একটা কারামাত বর্ননা করেন৷ ছাত্র জমানার কথা৷ একদিন হযরত মাদ্রাসা থেকে বাড়ীর উদ্দেশ্য ট্রেন যুগে রওয়ানা করেন ৷ কিন্ত তিনি তাঁর ষ্টেষনে না নেমে ভুলে অন্য জায়গায় নেমে যান৷ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হযরতের পকেটে ও ছিল না টাকা পয়সা৷ তাই ষ্টেষন মাষ্টার হযরত কে বললেন আপনি টেনশন করবেন না আরেকটা ট্রেন আপনার গন্তব্যে যাওয়ার আছে ৷ আসলে আপনাকে উঠিয়ে দিবো৷ তাই তিনি রেলষ্টেষনে ই ঘুমিয়ে যান ৷ ঘুম থেকে উঠার পর জনৈক এক ব্যক্তি এসে বললঃ বাবা কোথায় যাবে? হুজুর যা বলার বললেন৷ পরে ঐ ব্যক্তি হুজুরকে প্রয়োজন পরিমান কিছু রুপি দিলেন ৷সম্ভবত পাঁচ রুপি৷ এবং বললেন আমি অমুক এলাকার লোক এই রুপি গুলো নাও৷ প্রয়োজন পূরণ করো৷ পরে হুজুর বাড়ীতে গিয়ে তাঁর ঋন আদায়ের জন্য বাবাকে নিয়ে ঐ এলাকায় যান৷ কিন্তু খোজ খবর নিয়ে জানা যায় ঐ এলাকায় কোন মুসলিম পরিবার ই নাই৷
পরে হুজুর বলেন আমার মনে হয় তিনি ই রিজালুল গায়েবের অন্তরভুক্ত৷ এমন আরো বহু কারামাত হজরতের জীবনে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে৷

--তাদরিসী খিদমাত

  হযরতের জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতার অন্যতম একটি অমর কীর্তি হল তিনি অর্ধ শতাধিক বছরের দরস তাদরিসের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে নিজেকে ধন্য করেন৷ তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের বয়স যখন পূর্ন এক বৎসর তথা ১৩৮২ হিঃ তে দাওরা হাদীস পড়েন৷ ১৩৯৩ তে দারুল উলুম দেওবন্দে তাদরিসের খেদমত আরম্ভ করেন৷ তিনি দরসে নিজামীর প্রায় কিতাবের ই পাঠ দান করেছেন৷ বিশেষত সিহাহ সিত্তাহর সব কিতাব ই পড়িয়েছেন৷ তিনি বিশ বছরের মত হুজ্জাতুল্লিহিল বালিগাহর দরস প্রদান করেন৷ শুধু তাই নয় তিনি অনেক  কিছুতেই মোমতাজ এক শখছিয়্যাতের নাম৷ তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে প্রায় ত্রিশ বছর উম্মাহাতুস সুনান জামে তিরমিজির দরস প্রদান করেন৷ যার কথা আজো সারা দুনিয়ায় আলোচিত৷
 ১৪০২ হিঃ তে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে বুখারি সানী দরস প্রদান করেন৷ তৎকালীন সময়ে দারুল উলুমের নাযেমে তালীমাত ছিলেন হযরত মাওঃ রিয়াসাত আলী বিজনূরী রহঃ ৷
  ১৪০৫ হিঃ তে যখন শাইখুল হাদীস আল্লামা নাছির আহমদ খান সাহেব রহঃ অসুস্থ হয়ে চোখ অপারেশনের জন্য ছুটিতে যায় তখন তিনি ঐ বৎসর বুখারী প্রথম খন্ডের দরস দেন৷ তারপর হযরত সুস্থ হলে তিনি ই পড়ান ৷ খান সাহেব রহঃ
এর ইন্তেকালের পর ১৪২৯ হিঃ তে হযরত পালনপুরী দাঃবাঃ শাইখুল হাদীস হন৷ ঐ বৎসর ই শূরা সদস্যের সিদ্ধান্তে তিনি দারুল উলুমের ছদরুল মুদাররিস পদে ও নিযুক্ত হন৷ আজো তিনি কৃতিত্বের সাথে সেই পদে বহাল৷ তখন কার শিক্ষা সচিব ছিলেন হযরতুল উস্তায সায়্যিদ আরশাদ মাদানী দাঃ বাঃ৷

--  তা'লিফ ও তাছনিফী খিদমাত

  হযরত যেমন একজন যোগ্য খোদাভীরু মুদাররিস ও মুকাররির তেমনি তিনি একজন লেখক গবেষক ও৷ এ যাবৎ তিনি প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি ছোট বড়  কিতাব রচনা করেছেন৷ যার মধ্যে অন্যতম হল পবিত্র কালামে হাকিমের তাফসীর গ্রন্থ হেদায়াতুল কোরআন৷

১৷    هداية القران  
যার মাকবুলিয়াতের সাক্ষর খোদ স্বপ্ন যুগে পেয়েছেন৷ যা সত্যি এক মাকবুল তাফসীর ৷ যা সকলের কাছে ই গ্রহনযোগ্য৷ সর্বজনগৃহিত এক সু-সমৃদ্ধ তাফসির গ্রন্থ৷ যদি ও তা এখনো পূর্নতায় পৌছে নি ৷অবশ্যই তার কিছু অংশ ছেপে আসছে বাকি অংশের কাজ চলছে৷
আল্লাহ আছানের সাথে হুজুর কে বা-হায়াত ও সুস্থতার সাথে বাকি কাজ পূর্ন করার তৌফিক দান করুক৷

২৷رحمة الله الواسعة شرح حجة الله البالغة

  তার অনবদ্য গ্রন্থ যার কথা না বললেই নয়৷ হুজ্জাতুল্লিহিল বালিগাহর অমর গ্রন্থ শরাহ ৷মোটা মোটা পাঁচ খন্ডের এক মাকবুল ব্যাখ্যা গ্রন্থ৷ যার নাম রহমাতিল্লাহিল ওয়াছিয়াহ ৷
 
 ৩৷ تحفة القاري شرح صحيح البخاري

 তিনি সিহাহ সিত্যাহর ও বহু কিতাবের শরাহ করেছেন৷ যেমন সহিহ বুখারির শরাহ "তুহফাতুল কারি" যা মোটা মোটা বার খন্ডের এক বিশাল কিতাব৷ যা মাত্র তিন বছরে পূর্নতায় পৌছান৷ অথছ বুখারীর শরাহ লিখতে মানুষ পূর্ন জীবন ও ব্যায় করে দেয় ৷ তার পর ও খুব কম মানুষ ই সফলতার মূখ দেখ৷ এটাই তো খোদা-দাদ কামালিয়্যাত৷

৪৷ فيض المنعم شرح مقدمة المسلم

   হযরতের মুসলিম শরিফের মুকাদ্দিমার শরাহ "ফয়যুল মুনঈম" থেকে কে আছে উপকৃত হয় না৷

৫৷ إيضاح المسلم

 তিনি শুধু মুকাদ্দিমার ব্যাখ্যা লিখেই ক্ষান্ত হন নাই ৷তিনি মুসলিম শরিফের ও আড়াইশ পৃষ্ঠা ব্যাপি এক শরাহ লিখেন যার নাম "ইযাহুল মুসলিম" যেখানে কিতাবুল ঈমানের ও কিতাবুত্বহারাতের আলোচনা৷
৬৷ تحفة الألمعي شرح سنن الترمذي

   তিনি উম্মাহাতুস সুনান তিরমিজীর মত কিতাবের ও শরাহ লিখতে পিচপা হন নাই৷ দীর্ঘ ত্রিশবছরের তাকরীর সম্মিলিত তিরমিজী শরীফের ব্যখ্যা গ্রন্থ "তুহফাতুল আলমায়ী" নামক গ্রন্থ পাঠকের সামনে পেশ করেছেন৷ যা মোট আট খন্ডের বিশাল কিতাব৷ আহলে ইলমের খেদমতে রেখেছেন এধরনের অনেক অমর কীর্তি৷

৭৷     زبدة المقصود  

  তিনি তহাবী শরীফের ও শরাহ লিখেন৷ যার নাম যুবদাতুল মাকছুদ আলা শরহে মায়ানীল আছারি লিত্বাহাবী৷
  হযরতের আরো অনেক এমন  কিতাব রয়েছে যা হযরতের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত সদকা জারিয়া হয়ে থাকবে৷ যেমনঃ
৮৷ইলমী খুতবাত ( দুই খন্ড)
৯৷ইফাদাতে নানুতুবী
১০৷ ইফাদাতে রশিদিয়াহ
১১৷তাহযীবুল মুগনী
১২৷মিফতাহুততাহযীব
 
১৩৷কেয়া মুক্তাদী কে লিয়ে ফাতেহা ওয়াজিব হ্যা?( হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেম নানুতুবী রহঃ এর লিখিত কিতাব তাওছিকুল কালাম এর শরাহ)
১৪৷মাহফুজাত ( তিন খন্ডের,ছোটদের জন্য)
১৫৷তুহফাতুদ্দুরার শরহে নুখবাতিল ফিকার৷( উসুলে হাদীসের উপর লিখিত সংক্ষিপ্ত রিসালা)
১৬৷ মাবাদিউল ফালসাফাহ
১৭৷মুঈনুল ফালসাফাহ
১৮৷ আপ ফতোয়া কাইছে দে
১৯৷ মাশাহির মুহাদ্দীসীন রুয়াতে হাদীস
২০৷ হায়াতে ইমাম আবু দাউদ
২১৷ হায়াতে ইমাম তহাবী
২২৷ ইসলাম তাগায়য়ুর পেযীর দুনিয়া মে৷( মুসলিম ইউনিভারসিটি, আলীগড় এবং জামিয়া মিল্লিয়াতে প্রদত্ব প্রবন্ধাবলী)
২৩৷ নুবওয়্যত ইনসানিয়়্যাত কো কেয়া দিয়া ৷
২৪৷ দাড়ী আওর আম্বীয়া কি সুন্নতি
২৫৷ তাসহীলে আদীল্লায়ে কামিলা ( শাইখুল হিন্দ রহঃএর লিখিত কিতাব আদিল্লায়ে কামিলার ব্যখ্যা গ্রন্থ)
২৬৷ হাওয়াশী আনাঈনি ঈযাহুল আদিল্লাহ
২৭৷ হাওয়াশী এমদাদুল ফতোয়া
 
২৮৷ মাবাদিয়ুল উসূল৷(উসূলে ফিকাহর উপর লিখিত ছোট রিসালা)
২৯৷আল ফাউযুল কাবীর ফি উসূলিততাফসীর৷(শাহ অলিউল্লাহ দেহলবী রহঃর লিখিত কিতাবের আরবীকরন)
৩০৷ আল আউনুল কাবীর
৩১৷আসান নাহব( উর্দ ভাষায়,দুই খন্ড)
৩২৷আসান ছরফ( উর্দু ভাষায় তিন খন্ডে)
৩৩৷গুঞ্জায়ে ছরফ শরহে পাঞ্জেগাঞ্জ৷

  এমন আরো বহু কিতাবে সফল ও স্বার্থক একজন জীবিত মুসান্নিফ তিনি৷ বর্তমানে হযরতের বয়স ৭৯ বছর৷ এতদা সত্বে ও এই মহান মানব দ্বীনের খাতিরে ছুটে যায় বিশ্বের আনাছে কানাছে৷ অন্য দিকে আবার দরসের এত বেশি পাবন্দ যার নজীর পৃথিবীতে বিরল৷ দরস বন্দ করে তিনি কোন দিন কোন অনুষ্ঠানে ও শরিক হন না ৷এমন কি তিনি দরসের পাবন্দি করতে গিয়ে ওমরার চেয়ে ও দরসকে তারজীহ দিয়ে থাকেন৷ তিনি সব সময় ই একাকিত্বকে পছন্দ করেন ৷ মানুষের সাথে অযথা মিলা মিশা আড্ডা মারা একদমই দেখতে পারেন না ৷এমন কি মানুষের বেশি হুজ্জুম হওয়ার কারনে তিনি দারুল দেওবন্দের সাবেক মোহতামিম আল্লামা মরগুবুর রহমান রহঃ এর জানাযায় ও শরিক হন নাই৷ তিনি বাকি জীবনের জন্য শুধু ইলমী ও দ্বীনি খেদমতের জন্য ফেদা করে দিয়েছেন৷
কিছুদিনের আগের কথা আগস্ট মাসে যখন হাটহাজারীর হযরত আল্লামা আহমদ শফি দাঃ বাঃ চিকিৎসার জন্য দিল্লির এ্যাপলো হসপিটাল আসেন৷ ঐ সফরে হযরত দেওবন্দে ও আসেন৷ তখন হযরততুল উস্তায পালনপুরী দাঃবাঃ হুজুরের সাথে দেখা করতে দারুল উলুমের মেহমান খানায় আসেন৷ তখন উভয় শাইখাইনের মাঝে হাল-পুরছি ও সালাম কালাম হয়৷ এক পর্যায় হযরত বলেন "এখন তো আমি শুধু ইলমী খেদমতে ফেদা৷ স্ত্রী ও নাই যে ঝামেলা আছে! "

---তাযকিয়া ও আত্নশুদ্ধির মেহনত
 হযরত যেমন উলুমে জাহেরীর মুহাক্কিক আলেম তেমনি তিনি একজন উলুমে বাতেনির ও আধ্যাত্বিক রাহবারে কামেল৷ ছাত্র জমানা থেকেই তিনি শাইখুল হাদীস আল্লামা যাকারিয়্যা রহঃ এর সাথে তাযকিয়ার সম্পর্ক করেন৷ তিনি সাহারানপুরে থাকা কালিন আসরের পর আল্লামা আঃ ক্বাদের সাহারানপুরি মজলিসে পাবন্দির সাথে শরিক হতেন৷ তিনি নিজেই বলেছেন যখন কোন হাদীস পড়তেন তার উপর আমল করা শপুরু করতেন৷ যখন তিনি পোষাকের সুন্নত তরিকা কিতাবে পড়েছেন ঐ দিন থেকেই তিনি নিছফে ছাক্ব পাঞ্জাবী পরিধান করেন৷ দরসে একদিন তো বলেই ফেলেছেন আবু দাউদের সবকে যে দিন তিনি মুসাফাহ করে দােয়া পড়ার হাদীস পড়েছেন তার উপর হুজুর ঐদিন থেকে আজো আমল করেন৷সত্যি তিনি একজন সুন্নত প্রেমিক খোদাভীরু আল্লাহওয়ালা মুযাক্কী ও মুসলিহে উমাম৷ তিনি বর্তমানে মাজাহেরুল উলুম ( ওয়াকফ্) এর মোহতামিম আল্লামা মুযাফ্ফর হুসাইন মাযাহেরী রহঃ এর খলিফা ও বাইয়াতের মুজায৷

--- বাইতুল্লাহর সফর
 ১৪০০ হিঃ মোতাবিক ১৯৮০ তে সর্ব প্রথম নদী পথে নিজের মোহতারামা আহলিয়া কে নিয়ে ফরজ হজ্ব পালন করেন ৷ ১৪০৬ হিঃ তে দ্বিতীয় বারের মত বাইতুল্লাহর মুসাফির হন ৷ অবশ্যই সেটা ছিল বদলী হজ্ব৷  ১৪১০ হিঃ তে এই মহা মনিষী তৃতীয় বারের মত সৌদি সরকারের মেহমান হয়ে হজ্ব পালন করেন ৷১৪১৪ হিঃ তে তিনি প্রথমবারের মত ওমরারা সফর করেন৷

--তাবলীগী খিদমাত
  হাজারো ব্যস্ততা নিয়ে এই মহান ব্যাক্তিত্ব নিজেই নিজেকে দ্বীনের কাজে করেছেন পূর্ন উৎসর্গ৷
মাদ্রাসা লম্বা ছুটি হলে ই বিশেষ করে রমজানের দীর্ঘ ছুটিতে তিনি ছুটে যান দ্বীন প্রচারে পৃথিবীর আনাচে কানাচে৷ ইসলামের আলো ছড়িয়ে দেন বিশ্বের গ্রামে গঞ্জে৷ ইউরুপ আমেরিকা সহ বর্তানিয়া ,কানাডা ,লন্ডন,ডুবাই সুদান ও আরব আমিরাত বাংলাদেশ পাকিস্তান সহ বিশ্বের বহু দেশে সফর করেছেন৷

 ----ফন্নী মাহারাত
  হযরত এমন এক মানুষ যার মাঝে রয়েছে প্রত্যেক ফনের ই দক্ষতা আর মাহারাত৷ আসলে দরসে না বসলে বুঝা দুস্কর৷ যেমনি তিনি একজন ছরফ ও নাহুবীদ তেমনি তিনি একজন উসূলবীদ৷ তিনি মান্তেক ফালসাফায় ও পিচিয়ে নয়৷ হযরত নিজেই দরসে বলেছেন তিনি মান্তেত বুঝার জন্য একটা দুইটা নয় প্রায় সতেরটা কিতাব অধ্যায়ন করেছেন৷ এমন
হার ফনের মাহের শখছিয়ত খুবই বিরল৷

  ----হযরতের ভাই বোন
  হযরত পালনপুরী দাঃ বাঃ এর পাঁচ ভাই চার বোন ৷
তার মধ্যে তাঁর একজন মা শরিক ভাই যার নাম আহমদ৷ হযরতের হাকিকী চার ভাই ৷ তিনি ই সবার বড় ৷
১৷ আঃরহমান
২৷আঃ মাজীদ
৩৷ হযরতুল উস্তায আমীন পালনপুরী দাঃবাঃ যিনি বর্তমানে দারুল উলুম দেওবন্দের মুহাদ্দীস৷
৪৷ হাবীবুর রহমান ৷
  ---হযরতের সন্তান সন্তুতি ৷
হযরত দাঃ বাঃ এর এগার ছেলে আর তিন মেয়ে ৷ তার মধ্যে এক ছেলে মাওঃ রশিদ আহমদ গাড়ী এক্সিড্ন্ট হয়ে শাহাদাতলহরন করেন ৷আর এক মেয়ে শৈশবে ই ইন্তেকাল করেন৷ বর্তমানে হযরতে বার জন সন্তান জীবিত আছে৷ সবাই ই হাফেজে কোরআন৷ ছেলেরা সবাই আলেম, দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত ৷
  অবশেষে বলি এমন একজন মহান মানুষকে পেয়ে নিজেকে আনন্দিত করি৷  নগন্য একজন ছাত্র হিসাবে বলতে পারি৷  সত্যি আপনাকে দিল থেকে মহব্বত করি ৷ আমার মত আপনার এমন হাজারো ছাত্র আছে যারা সরাসরি বলতে পারে না আপনাকে লিল্লাহিয়াতের সাথে মহব্বতের  কথা৷ সত্যি করে বলি আপনার মাঝে জামাল কামাল নাওয়ালের ভরপূর সমাহার৷ কতজন ই না আপনার সোনালী জীবন রচনা করার প্রহর গুনছে ৷ কতজন না লিখে ও ফেলছেন ৷ আল্লাহ আপনার ফয়েয ও উলুম কে সারা দুনিয়া বিস্তৃত করুক ৷ আমরা যেন তার কিছু অংশ নিয়ে ধন্য হতে পারি৷ সুস্থ ও নেক হায়াতের সাথে হযরতের দীর্ঘায়ু কামনা করি৷ আমিন ছুম্মা আমীন৷
              --:প্রেরনার উৎস:---
   হৃদয়ের গহীনে লালিত মহব্বতের
                 বহিঃপ্রকাশ৷
---- তামজীদুল মাওলা কাসেমী
-ফাযেলে দারুল উলুম মাদানী নগর,
                        ঢাকা৷
শিক্ষার্থী দারুল উলুম দেওবন্দ,ভারত৷
            ২৬/১০/২০১৭ ইং৷

কোন মন্তব্য নেই

nicodemos থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.