হিযবুত তাওহীদ, একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

মাহমুদুল হাসান শরীয়তপুরী


পর্ব : এক,
হাদীসের ভাষ্য মতে কানা দাজ্জাল ব্যতীত আরো দাজ্জাল আছে। যারা আসল দাজ্জাল আবির্ভাবের পরিবেশ তৈরি করে যাচ্ছে। অথচ তাদের সম্পর্কে আমরা ততোটা সতর্ক নই।

কিন্তু রাসূলে কারীম সা. তাদের সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন-
يكـون في آخـر الـزمان دجّالـون كذّابــون يأتـونــكم من الأحـاديث بما لم تَسمعــوا أنتم ولا آبـاؤكم فـإياكم وإيـاهم لا يُضلّـونـكم ولا يُفتِنـونـكم. رواه مسلم و في مشـكاة المصـابيح

অর্থ : শেষযুগে মিত্থাবাদী দাজ্জালেরা তোমাদের কাছে এমন কিছু কথা নিয়ে উপস্থিত হবে, যা ইতিপূর্বে তোমরা তো দূরের কথা, তোমাদের পূর্বপুরুষেরাও শুনেনি। সুতরাং তোমারা তাদের থেকে সাবধান থাকবে। তারা যেন তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে না পারে এবং ফিৎনায় পতিত করতে না পারে। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৭)

আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, বর্তমানে এ জাতীয় দাজ্জালের আনাগোনা দেশে অনেক বেড়ে গেছে। যারা এমন সব বানোয়াট আর মনগড়া কল্পকাহিনি রচনা করেছে, যেগুলোর সাথে কুরআন হাদীসের ন্যূনতম কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনকি তারা কুরআন হাদীসের স্পষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে পরিকল্পিতভাবে অপব্যাখ্যা করে করে সরলমনা মুমিনদের ঈমান আকীদা হরণ করে যাচ্ছে। অথচ হাদীসে বর্ণিত এই দাজ্জালদের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমাদের শক্তিশালী কোনো ভুমিকা নেই।

তাই আসুন, সকলে মিলে ইসলামের প্রকৃত দুশমন ও হাদীসে বর্ণিত দাজ্জালের হিংস্র থাবা হতে মুমিনদের ঈমান আকীদা হিফাযাতের লক্ষ্যে দুর্বার পদক্ষেপ গ্রহণ করি। ঈমান বিধ্বংসী এই দাজ্জালদেরকে এখনই রুখে দেয়া সময়ের শ্রেষ্ঠ দাবী। আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এরা ক্রমান্বয়ে শেকড় মজবুত করে চলছে।

দেশের বড় বড় দাজ্জালদের অন্যতম হলো, বায়েজিদ খান পন্নি। সে তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন, হেযবুত তাওহীদের মাধ্যমে কুরআন হাদীসের অপব্যাখ্যা ছড়িয়েছে। হাজার হাজার মুমিনদের ঈমান হরণ করেছে। এখনো তার অনুসারীরা তার মিশন প্রচার করে যাচ্ছে।



পর্ব : দুই,
বায়েজিদ খান পন্নী ও তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন হেযবুত তাওহীদ।

বায়েজিদ খান পন্নী টাংগাইল জেলার সদর থানাধীন করটিয়া ইউনিয়নে ১১ই মার্চ ১৯২৫ সনে জন্মগ্রহণ করে। সে বগুড়ার সরকারী আজিজুল হক কলেজ থেকে প্রথম বর্ষ এবং কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সমাপ্ত করে। অতপর হোমিও প্যাথিক চিকিৎসার উপর কিছুদিন পড়া লেখা করে।

বায়েজিদ খান পন্নী কলকাতায় অধ্যয়নকালে একপর্যায়ে সেখানকার বামপন্থি রাজনীতিবিদদের সাথে যোগ দিয়ে বস্তুবাদী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। আর সাধারণত অধিকাংশ রাজনীতিবিদদের মধ্যে নেতৃত্ব দেয়ার শখটা এটু বেশিই থাকে। একাকি পথচলা তাদের জন্য একটি দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। একই ধারায় পন্নীও সে অভ্যাসে নিজেকে গড়ে তোলে।

দেশের বাড়ি টাংগাইলে ফেরার পর কী করবে সে। কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পেরে প্রাথমিকভাবে নিজ এলাকায় একটি ফার্মেসি দিয়ে হোমিও প্যাথিক ঔষধ বিক্রি করা শুরু করে। কিন্তু তাতে কি অট্টলিকা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে? সর্বপরি পুরাতন অভ্যাসে গড়ে ওঠা লোকটির জন্য নেতৃত্ব দেয়ার মানসিক প্রতিভা দমিয়ে রাখাই ছিল খুব কষ্টকর ব্যাপার। আজীবন এলাকাভিত্তিক একজন হাতুড়ে ডাক্তার হয়ে থাকলে নেতৃত্বের আসন কামনা করা আকাশ কুসুম স্বপ্ন বৈ আর কী হতে পারে। তাই নেতৃত্ব দেয়ার সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করার লক্ষ্যে একটি বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে সে।

প্রাথমিকভাবে নিজ এলাকার কতিপয় লোকদেরকে অর্থ ও পদের লোভ দেখিয়ে পূর্ণরূপে হাত করে নেয়। নিজ টার্গেট সামনে রেখে তাদেরকে যথারীতি প্রশিক্ষণ দিয়ে যায় সে। সংগঠন পরিচালনার কলাকৌশল শিখালো। তাদের শিখালো, সরলমনা মানুষকে সংগঠনের প্রতি আকৃষ্ট করার কার্যকরী কৌশল। কলকাতার বস্তুবাদী রাজনীতিবিদদের থেকে প্রাপ্ত কৌশলগুলো ভক্তদেরকে মোটামুটি ভালো করেই শেখালো। তাই নিজ স্বপ্ন বাস্তবায়নে আগামীর পথচলা তার জন্য হবে সহজ ও গতিময়।

এর মাঝেই সে জনমত তৈরির লক্ষ্যে নিজ এলাকায় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। পূর্বকৌশলের উপর ভিত্তি করে সংসদ নির্বাচনে সফলও হয়। এতে তার পাশে ভক্তবৃন্দের ভিড় অনেক বেড়ে গেলো।

কল্পিত লক্ষ্য সামনে রেখে নিবেদিত কর্মীদের নিয়ে ১৯৯৫ সনে গঠন করলেন "হেযবুত তাওহিদ" নামক সংগঠন। লক্ষ্য উদ্দেশ্যসহ প্রণয়ন করলেন কল্পিত গঠনতন্ত্র৷

ইসলামের অপব্যাখ্যা করে তিনি যেসব বই লিখেছেন-
①দাজ্জাল? ইহুদী-খ্রীস্টান ‘সভ্যতা’
②ইসলামের প্রকৃত রূপরেখা
③দ্য লস্ট ইসলাম
④জেহাদ, কেতাল ও সন্ত্রাস
⑤এ ইসলাম ইসলামই নয়
⑥তার প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা- দৈনিক বজ্রশক্তি

সে ১৬ই জানুয়ারী ২০১৬ইং সনে ইহজগৎ ত্যাগ করে।

ভূ-গর্ভে চলে গেলেও তার বইগুলোতে লেখা ঈমান বিধ্বংসী আকীদাগুলো তার নিবেদিত অনুসারীরা প্রচার করেই যাচ্ছে। এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে গিয়ে সরলমনা মুসলমানদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঈমান হরণ করে যাচ্ছে।

দাজ্জাল পন্নীর সবচেয়ে বড় সহযোগী ছিলো, তার মেয়ে রুফায়দা খান পন্নী। আর হেযবুত তাওহীদের বর্তমান আমীর হলো, নোয়াখালীর হোসাইন মুহাম্মদ সেলিম। সে কুমিল্লার লাকসাম কলেজে অধ্যয়নকালে শিবিরের সভাপতি ছিল এবং সেখানে কয়েকটি মাডার কেচের আসামীও ছিল সে। সে একজন সন্ত্রাস হিসেবে সেখানে ভালোই পরিচিতি লাভ করেছে। বক্তব্যের মাঝেও তার চারিত্রিক গতিবিধি ফুটে ওঠে।

এদের মতো দাজ্জাল আরো অনেকেই আছে। যারা ইয়াহুদী খ্রীষ্টানদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এদেরকে কঠোর হস্তে রুখে দেয়া সকল মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব।

আমাদের একটি সমস্যা হলো, কোনো ফিৎনার যাত্রালগ্নে ছোট মনে করে এড়িয়ে যাই। পদক্ষেপ নিই না। পরে যখন বড় আকার ধারণ করে তখন হায়-হতাশা শুরু করি। গাছ ছোট থাকতে সোজা করার চেষ্টা না করে, বড় হওয়ার পর সোজা করার চেষ্টা চালালে যা হয় আরকি।

চন্দ্রপুরী, মাইজভান্ডরী, আটরশী, রাজারবাগী, কুতুববাগী, দেওয়ানবাগী, সুরেস্বরী ইত্যাদি দাজ্জালেরাও একসময় ছোটই ছিল। কিন্তু এখন শেকড় মজবুত করে বসেছে। এমনকি স্বার্থের লোভে এমপি-মন্ত্রীরাও তাদের কাছে যায়।

বর্তমান সমাজে হেযবুত তাোহীদ নামক সংগঠন ততোটা শক্তিশালী না হলেও কার্যক্রম এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে। বড় ধরনের জনমত তৈরি করতে বেশিদিনের প্রয়োজন হবে না তাদের। তাই এখনই সময়, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার।



পর্ব : তিন,
দাজ্জাল বায়েজিদ খান পন্নী ও তার অনুসারীদের ইসলাম বিরুধি আকীদা বিশ্বাস।

দাজ্জাল পন্নী কর্তৃক লিখিত পুস্তকাদি ও তার প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা "দৈনিক বজ্রশক্তি" এবং ইউটিউবে তাদের আপলোড করা বিভিন্ন বক্তব্যে ইসলাম বিরুধি ও ঈমান বিধ্বংসী যে সমস্ত আকীদা প্রচার হচ্ছে তার কয়েটি নিম্নে তুলে ধরা হলো-

①বায়েজিদ খান পন্নী আল্লাহ প্রদত্ত মোজেযার মাধ্যমে সারা বিশ্বের জন্য এমাম নিযুক্ত হয়েছে।

পর্যালোচনা- বায়েজিদ খান পন্নী অভ্যন্তরীণভাবে নবুওত দাবির চেষ্টা করেছে। কারণ মোজেযা তো নবীদের দ্বারাই সংঘটিত হয়। কিন্তু পিঠ বাঁচাতে নবী দাবি না করে, ইমাম দাবি করেছে। এমন দাবির পরেও কি ঈমান থাকে?

②পন্নী তার বক্তব্যে বলেছে, মহা সত্য পেয়ে যেখানে অনেক নবী রাসূলগন ব্যর্থ হয়েছেন সেখানে আল্লাহ আমাকে কনফার্ম করেদিলেন- করো, হবে।

পর্যালোচনা- এটা কি নবী দাবির নামান্তর নয়? কারণ কোনো ববিষয়ে কনফার্ম হতে হলে অহীর প্রয়োজন হয়। সেখানে সে কনফার্ম হলেন কিভাবে? আর নবী রাসূলদের সম্পর্কে এমন বেয়াদবিমুলক ও কুরআন হাদীস বিরুধি আকীদা পোষণ করলে কী করে ঈমান থাকে?

③সকল ধর্মের মর্মকথা, সবার উর্ধে মানবতা।

পর্যালোচনা- কুরআন বলে, "আল্লাহর বিধান সবার উর্ধে।" আর তাতেই মানবতার নিশ্চয়তা রয়েছে। কিন্তু কতিপয় ধর্মদ্রোহীর তা বুঝে আসে না।

④হেযবুত তাওহীদের একজন জীবিত সদস্য দুইজন শহীদের সমতুল্য।

পর্যালোচনা- অত্র আকীদাটি কুরআন হাদীসের সাথে পরিপূর্ণ সাংঘর্ষিক।

⑤মৃত্যুর পরে তাদের সদস্যদের শরীর শক্ত হয় না।

পর্যালোচনা- অত্র দাবির সত্যায়নে তারা কয়েকটি প্রমাণ পেশ করে। এগুলোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। আর এমনটি কারো কারো হতে পারে। এটা আশ্চর্যের কোনো বিষয়ও না।

⑥কবরে তাদের লাশ অক্ষত থাকে।

পর্যালোচনা- এমন দাবি হাদীস পরিপন্থী। কারণ রাসূলে কারীম সা. বলেন, "আল্লাহ তাআলা নবীদের লাশ গ্রাস করাকে মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন"। সেখানে অভ্যন্তরীণভাবে তাদের সদস্যদেরকে তারা নবীদের মতো মর্যাদায় ভূষিত করতে চায়।

⑦কুরআনসহ সব ধর্মীয় গ্রন্থ যেমন- বাইবেল, বেদ, পুরান, মহা ভারত, উপনিষাদ, মনুসংহিতা, ভবিষ্যপুরাণম, গিতা, শ্রীগিতা, ইত্যাদি সব গ্রন্থকে সমানভাবে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। কারণ এগুলো সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে।

পর্যালোচনা- এটা একটি কুফরী আকীদা। কারণ উল্লিখিত ধর্মগ্রন্থগুলোকে আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্যায়ন করা হয়নি। কারণ এর কোনো প্রমাণ আল্লাহর মনোনীত দ্বীনে ইসলামে নেই। তবুও এমন আকীদা রাখলে কি আল্লাহর প্রতি মিত্থা অপবাদ দেয়া হবে না?

⑧নবীগনের নামের পরে আমরা যেভাবে "আলাইহিস সাল্লাম" বলি, তেমনিভাবে অন্যান্য ধর্মের অনুসরনীয় ব্যক্তিদের নামের পরেও "আলাইহিস সালাম" বলতে হয়। কারণ তারা সকলে আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তির বার্তা নিয়ে প্রেরিত হয়েছে। যেমন-
রামচন্দ্র আলাইহিস সালাম
কৃষ্ণ আলাইহিস সালাম
বৌদ্ধ আলাইহিস সালাম
পল আলাইহিস সালাম
মনু আলাইহিস সালাম
রামকৃষ্ণ আলাইহিস সালাম
শ্রীকৃষ্ণ আলাইহিস সালাম
যথিষ্টির আলাইহিস সালাম
মহাবীর আলাইহিস সালাম।

পর্যালোচনা- যারা আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের বিপরীতে অন্যান্য ধর্ম রচনা করে আল্লাহর বিরুদ্ধে অঘোষিত বিদ্রোহ করেছে তাদেরকে নবীদের মতো সম্মান প্রদর্শন করলেও ঈমান থাকে কিভাবে?

⑨সনাতন ধর্মই হলো প্রকৃত ধর্ম।

পর্যালোচনা- স্পষ্ট কুরআন বিরুধি আকীদা। কুরআন বলে, আল্লাহর মনোনীত দ্বীন হলো ইসলাম।

⑩দাজ্জাল বলতে কোনো প্রাণীর আবির্ভাব হবে না। ইয়াহুদী খ্রীস্টান সভ্যতাই প্রকৃত দাজ্জাল।

পর্যালোচনা- হাদীসের প্রত্যেকটি কিতাবে রাসূলে কারীম সা. থেকে স্পষ্ট হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে, যাতে কিয়ামতের আলামত হিসেবে দাজ্জালের পূর্ণ বিবরণ দেয়া হয়েছে। তার দৈহিক গঠন কেমন হবে তা-ও স্পষ্টরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। তবুও অস্বিকার করলে ঈমান থাকে কিভাবে? উল্লেখ্য যে, ইসলামের নামে এধরনের মিত্থা ও বানোয়াট কথা প্রচারককে হাদীসে দাজ্জাল বলা হয়েছে।

⑪সামজিক জীবন ব্যবস্থাকেই দ্বীন বলা হয়।

পর্যালোচনা- এটি কুরআন হাদীসের সাথে স্পষ্ট বিরোধপূর্ণ কথা। এ আকীদা পোষণের কারণেই তারা ব্যক্তি জীবনে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে না। এজন্যই তাদের মাঝে আমলের চিহ্ন দেখা যায় না। দাড়ি-টুপি, পর্দা, সুন্নাতি পোষাক ইত্যাদি আমলের ব্যাপারে তারা সীমাহীন শিথিল।

⑫ঈসা আ. মানুষের আত্মা সংশোধন করার জন্য এসেছেন। তাঁকে কোনো আইন দেওয়া হয়নি।

পর্যালোচনা- কথাটি দ্বারা কুরআনের কয়েকটি আয়াতকে অবমাননা করা হয়েছে। ঈসা আ.এর উপরে আল্লাহ তাআলা আসমানী চারটি কিতাবের মধ্য থেকে ইঞ্জিল কিতাব অবতীর্ণ করেছিলেন। আর তা বিধানসম্বলিত ছিল।

⑬হেযবুত তাওহীদের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে প্রকৃত ধর্ম প্রচার হবে। এটা আল্লাহর নির্দেশ।

পর্যালোচনা- এই কথাটা কুরআন  হাদীসের কোথাও নেই। আর আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিলে অবশ্যই কুরআন হাদীসে থাকতো। তাই এটা একটি মিথ্যা দাবি। তাদের মাধ্যমেই কি প্রকৃত ধর্ম এই প্রথম প্রচার হবে? ইতিপূর্বে সকল মুসলমান কি বিকৃত ধর্মের অনুসারী ছিল?

⑭মক্কা মমদীনাসহ বর্তমান পৃথিবীর কোথাও প্রকৃত ইসলাম নেই। সব অপব্যাখ্যা হচ্ছে।

পর্যালোচনা- যাদের সব আকীদাগুলোই কুরআন হাদীস বিরুধি, তারাই কি প্রকৃত ইসলামের ঠিকাদার?

⑮বিশ্বের সব আলেমরা হলো ধর্ম ব্যবসায়ী।

পর্যালোচনা- উলামায়ে কিরাম হলেন দ্বীনে ইসলামের অতন্দ্র প্রহরী। রাসূলে কারীম সা. তাঁদেরকে ইলমের ওয়ারিস বানিয়েছেন। তবুও আলেমদেরকে ধর্ম ব্যবসায়ী সাব্যস্ত করে সাধারণ মুসলমানদেরকে তাঁদের থেকে দূরে সরিয়ে নিজেদের আয়েত্বাধীন করার অপকৌশল বৈ আর কী হতে পারে?

⑯পৃথিবীর সব আলেমরা ধর্ম ব্যবসায়ী। তাদের পেছনে নামায হবে না।

পর্যালোচনা- কোনো সমাজের ইমাম যদি গুনাহগার হয় আর তাকে বিতারিত করা না যায় তাহলে তার পেছনেই নামাযের ইক্তিদা করতে হবে। ঘরে বসে একাকি নামায আদায়ের অনুমতি ইসলামে নেই। এটাই হাদীসের ভাষ্য। ইবনে মাসউদ রা. কর্তৃক এমন আমল পাওয়া যায়। বাস্তব কথা হলো, এরা ভিন্ন নিয়মে নামায আদায় করে। এই প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্যই তারা ভক্তদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করে।

⑰আলেমরাই সব সমস্যার মূল। তাই তাদেরকে বয়কট করতে হবে।

পর্যালোচনা- উলামায়ে কিরাম হলেন দ্বীনে ইসলামের অতন্দ্র প্রহরী। রাসূলে কারীম সা. তাঁদেরকে ইলমের ওয়ারিস বানিয়েছেন। তবুও আলেমদেরকে সব সমস্যার মূল সাব্যস্ত করে সাধারণ মুসলমানদেরকে তাঁদের থেকে দূরে সরিয়ে নিজেদের আয়েত্বাধীন করার অপকৌশল বৈ আর কী হতে পারে? আর তাঁদের প্রতি এমন ধারণা রাখলে ঈমান থাকে কিভাবে? ধর্মগুরুদের বিরুধিতা করা মানে ধর্মকে অচল করে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া।

⑱আলেমদের হাত থেকে এসলামকে উদ্ধার করে হেযবুত তওহীদের আমীরের কাছে বাইয়াত হতে হবে।

পর্যালোচনা- আলেমদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই এদের মূল টার্গেট। তাহলেই সাধারণ মুসলমানদেরকে নিজেদের কাছে ভিড়ানো সম্ভব হবে। রাসূলে কারীম সা. ভবিষ্যৎবাণী দিতে গিয়ে হযরত মাহদির কাছে বাইয়াতের কথা বলেছেন। সেখানে হেযবুত তাওহীদের আমীর আবার কে?

⑲বায়েজিদ খান পন্নীর নির্দেশ মানা সারা বিশ্বের মানুষের উপর ফরজ।

পর্যালোচনা- এটা দ্বীন বিকৃতির নামান্তর। কারণ কোনো কাজকে ফরজ সাব্যস্ত করতে হলে কুরআন হাদীসের স্পষ্ট দলীল আবশ্যক। আর তারা দলীল ছাড়াই একটি কাজকে ফরজ দাবি করে বসেছে। এখন অপব্যাখ্যাকারী কারা হলো?

⑳সারা বিশ্বে বিকৃত এসলামের অনুসারী একশো বিশ কোটি। আর প্রকৃত এসলামের অনুসারী মাত্র পাঁচ লক্ষ্য।

পর্যালোচনা- তাদের দাবি মতে হেযবুত তওহীদের সদস্য পাঁচ লক্ষ। আর শুধুমাত্র এরাই প্রকৃত (?) ইসলামের অনুসারী। তাছাড়া সারা বিশ্বের সকল মুসলমানেরা বিকৃত ইসলাম পালন করছে। দেখুন, কতো বড় বেয়াকুফ হইলে এমন কথা বলতে পারে। তাদের কথা অনুযায়ী তারা ব্যতীত  বিশ্বের সকল মানুষ কাফের। কোথাও কোনো মুসলমান নেই। আমরা বুখারী শরীফের একটি হাদীসের ভাষ্য মতে দেখতে পাই, যে ব্যক্তি বললো, সব মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে, তাহলে বুঝতে হবে সে-ই সবচেয়ে বড় ধ্বংসপ্রাপ্ত।

(21)প্রকৃত এসলামের অনুসারীরা (সাহাবাগন) ছিলেন যোদ্ধা চরিত্রের। সবার শরীরেই ক্ষতর দাগ ছিল।

পর্যালোচনা- ইসলামের বিরুদ্ধে এধরনের মিত্থাচার শুধুমাত্র নাস্তিক ও কাফেরদের দ্বারাই সম্ভব। কোনো মুসলমানের দ্বারা সম্ভব নয়। তবুও কি আমরা এদেরকে মুসলমান মনে করতে পারি? যেখানে বিধর্মী ঐতিহাসিকেরাও স্বিকার করেছে যে, ইসলামের যুদ্ধগুলো সংগঠিত হয়েছিল কেবলমাত্র আত্মরক্ষামুলক। আক্রমণাত্বক নয়। নিজেদের জীবন রক্ষার জন্য সাহাবায়ে কিরাম যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে বাধ্য হয়েছেন। শত্রুপক্ষ কাফেরগোষ্ঠী তাঁদেরকে রণাঙ্গনে নামতে বাধ্য করেছে। আর কেউ কোনো কাজ বাধ্য হয়ে করলে তাকে ওই কাজের অভ্যস্ত মনে করা কতো বড় নির্বুদ্ধিতার পরিচয় হতে পারে! এতোকিছুর পরেও এরা ঈমানদার (?)।

(22)যে যতো বেশি ধার্মিক সে ততো বড় কাপুরুষ।

পর্যালোচনা- কুরআন হাদীসের ভাষ্য মতে যে যতো বেশি ধার্মিক সে ততো বড় বীর। যার ঈমান যতো মজবুত সে ততো বড় সাহসী। অর্থাৎ ঈমানের পাওয়ার অনুপাতে বীরত্ব ও সাহসিকতার পাওয়ার। কিন্তু তাদের ধারণাটা এতো জঘন্য কেন? এজন্যই বুঝি তারা ইসলামের বিধানাবলী পালনে একেবারে শিথিল। পালন করলে না জানি আবার কাপুরুষতা চলে আসে। তবে আমরা তো তাদের বীরত্বের ইতিহাস জানিই। মেয়ে তার বাবাকে রড নিয়ে তেড়ে গেলেই বীরত্বের পরিচয় হয় (?)।

তাদের সবচেয়ে বড় টার্গেট হলো, উলামায়ে কিরামের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে সাধারণ মুসলমানদেরকে দ্বীন থেকে নৈরাশ করা।

বি.দ্র. উল্লিখিত আকীদাগুলো বায়েজিদ খান পন্নি রচিত বই পুস্তকসহ তাদের বিভিন্ন লিখনী ও বক্তব্য থেকে সংগ্রহ করেছি। ঘাটাঘাটি করলে যে কেউ এগুলো সহজেই পেয়ে যাবে।

☞কোনো ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে ধরিয়ে দেয়ার আবেদন। আর আপনার জানা মতে কোনো তথ্য থাকলে কমেন্টে সহযোগিতা করতে পারেন।

1 টি মন্তব্য:

nicodemos থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.